স্ট্যাচু অফ ইউনিটি গড়ে ওঠার তথ্য জানা আছে কি ?

অর্ঘ্য মাহাতোঃ বল্লভ ভাই প্যাটেল, ভারতবাসীর কাছে যার পরিচিতি “লৌহ পুরুষ” বা “সর্দার” নামে। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে হাজার হাজার শহীদের মাঝে দেশের নেতা হয়ে উঠেলিছেন নেতাজি সুভাষ, মহাত্মা গান্ধীর মতো রাজনেতারা। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তীতে, খন্ড-বিখন্ড চিন্তায়-ভাবনায় থাকা ৫৬৫টি প্রদেশের মহারাজা ও নবাবদের মধ্যে ভারতবর্ষ তৈরী করার বিভেদ তৈরী হয়। যার সমাধানে ও দেশ তৈরীর দূরদৰ্শিতাকে তাদের সামনে তুলে ধরার জন্য প্রয়োজন ছিল এমন একজন রাজনেতার যিনি ভারতবর্ষের রূপরেখা তৈরী করবেন। এই অবস্থায় সমগ্র ভারতবর্ষ গড়ার দায়িত্ব নেন বল্লভ ভাই প্যাটেল। বেশিরভাগ প্রদেশের মহারাজা ও বাকি প্রদেশের নবাবদের মধ্যে ভারতবর্ষ গড়ার ঐক্যতার লক্ষ্যে যে কঠিন দায়িত্ব তার কাঁধে ছিল, একজন দেশের যোগ্য রাজনেতা বা একটি জাতির “সর্দার” হয়ে তিনি “লৌহ পুরুষ”এর পরিচয় দেন। সমস্ত প্রদেশের রাজাদের তাদের প্রজাদের  সমান অধিকার, সমান আইনের লক্ষ্যে ঐক্যমতে পৌঁছান ও আজকের ভারতবর্ষ গঠন করেন।

 

স্বাধীনতার পরবর্তী ইতিহাসে “একতার প্রতীক” সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের জন্ম গুজরাটের নারিয়াদে। রাজ্যের মুখমন্ত্রী থাকাকালীন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্ন ছিল সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের বিশ্বের সর্বোচ্চ মূর্তি তৈরী করা। ঐক্য ভারতবর্ষ গঠনে তার অবদানের জন্য মূর্তির নাম রাখা হয় “স্ট্যাচু অফ ইউনিটি”। সেই উদ্যোগে প্রজেক্টের প্রথম ঘোষণা করা হয় ২০১০ সালের ৭ই অক্টোবর। প্রজেক্ট রূপায়ণে গুজরাটের সরকার  সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল একতা ট্রাস্ট তৈরী করে। ১৮২ মিটার মূর্তি তৈরির জন্য টেন্ডার ডাকা হয়। ২৯৮৯কোটি টাকায় প্রজেক্টের দায়িত্ব পায় ভারতীয় কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লারসেন এন্ড টুব্রো। প্রজেক্ট কন্সালট্যান্টের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি টার্নার প্রাইভেট লিমিটেড,যারা অতীতে তৈরী করেছে বিশ্বের সর্বোচ্চ বিল্ডিং দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা এবং মেইনহার্ডট ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড ও মাইকেল গ্রাভস এন্ড এসোসিয়েটসকে। তাদের দায়িত্ব ছিল প্রজেক্টের প্ল্যানিং, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও কনস্ট্রাকশন মানাজেমেন্টের। নর্মদা নদীতে অবস্থিত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বাঁধ, সর্দার সরোবর বাঁধের সম্মুখে ৩.২ কিমি দূরে তৈরী করা হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম মূর্তি, “স্ট্যাচু অফ ইউনিটি”।

স্টিল ফ্রেম, কংক্রিট ও ব্রোঞ্জ আলোয় তৈরী এই মূর্তিকে রাজ্যের পর্যটন শিল্পের প্রধান মুখ করা হবে। এখানে  তৈরী করা হয়েছে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের স্বপ্নের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র । নর্মদার তীরে তৈরী হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ভারত ভবন যেখান থেকে মূর্তি ও নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে পর্যটকরা। থাকছে লৌহ পুরুষের মিউজিয়াম, লেসার ও লাইট শো, মূর্তিকে কাছ থেকে দেখার জন্য তৈরী করা হয়েছে ৪০০ফুট উঁচু লিফ্ট। নদীর মধ্যে অবস্থিত মূর্তি ও তার চারপাশে ভ্রমণের জন্য বোটে ফেরি ভ্রমণের ব্যবস্থাও থাকছে।

নরেন্দ্র মোদির ভাবনায় দেশের প্রতিটি গ্রাম থেকে কৃষকদের কাছ থেকে এক টুকরো লোহা নিয়ে লৌহ পুরুষের মূর্তি তৈরী করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এরজন্য দেশ জুড়ে ‘লোহা অভিযান’ চালানো হয়। প্রায় ৫০০০০০ জন কৃষক এরজন্য লোহা দান করেন। পরবর্তী সময়ে “রান ফর ইউনিটি” অভিযান করা হয়।

ইতিহাস ও পর্যটনকেন্দ্রের সংযোগস্থল, ভারতবাসী তথা বিশ্বের ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে অন্যতম কেন্দ্র হতে চলেছে। আমেরিকার “স্ট্যাচু অফ লিবার্টি”, ব্রাজিলের “খ্রীষ্ট দে রিদিমার” তাদের দেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরে বিশ্বের কাছে পর্যটনকেন্দ্র তৈরী করেছে। সময়ের সাথে গুজরাট রাজ্যের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার অপেক্ষা করছে লৌহপুরুষের “স্ট্যাচু অফ ইউনিটি”।

error: Content is protected !!