চুরাইবাড়িতে মৃত ব্যক্তির জমির দলিল তৈরী করে বিক্রির অভিযোগ

কিষান কুমার মালী(রিপোর্টার,চুরাইবাড়ি): মৃত ব্যক্তিকে জীবিত বানিয়ে ভূযো টিপ সই দিয়ে দলিল বানিয়ে ভূমি দখল করার অভিযোগ উঠল চার জমি মাফিয়ার বিরুদ্ধে। ঘটনা চুড়াইবাড়ি তহশীল মৌজার প্রেমতলা এলাকার ফুলবাড়ি গ্ৰামের ১নং ওয়ার্ডে। এই তহশীল মৌজার ৯৩০ নং খতিয়ানের ১৩৬ নং দাগের ১০৭ শতক ভূমির মালিক হচ্ছেন ছিদ্দেক আলী-পিতা আরজান আলী। যার মৃত্যু ৯ /৬/ ৮৭ তারিখে হয়েছিল এবং ডেড সার্টিফিকেটও রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই ছিদ্দেক আলী এত বছর পর আবার কিভাবে জীবিত হলেন?

অনেকেই তাজ্জব হতে পারেন যে মৃত ব্যক্তি কিভাবে জীবিত হয়? কিন্তু সাব রেজিস্ট্রার এর দলিল, নামজারীর রিপোর্ট ও নামজারির নোটিশে দেখা যাচ্ছে মৃত ছিদ্দেক আলী চার ব্যক্তির কাছে উনার ১৬ শতক জমি বিক্রি করেছেন এবং দলিলে উনার টিপসই রয়েছে। শরিফ উদ্দিনের কাছে ১৮/৪/২০১৭ তারিখে জায়গা বিক্রি করেছেন ছিদ্দেক আলী। একই সঙ্গে ১৭-১-১৮ তারিখে রফিক উদ্দিনের কাছে। ১২-৪-১৮ তারিখে আবু বক্করের কাছে এবং ১১/৮/১৭ তারিখে আবুল হোসেন নামের অপর এক ব্যক্তির কাছে জায়গা বিক্রি করেন মৃত সিদ্দিক আলী। কিন্তু সিদ্দেক আলীর নাতি লাল মিয়ার অভিযোগ এই চার ব্যক্তি তাদের সাথে প্রতারণা করে সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া দলিল বানিয়ে ভূমি দখল করেছেন। তিনি বিষয়টি তদন্তের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে নথিপত্রসহ অভিযোগ নামা পাঠিয়েছেন।

সিদ্দেক আলীর ছেলে ও নাতির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে যে দলিল ও কাগজপত্র গুলি সম্পূর্ণ ভুয়া তবে মৃত ব্যক্তি কিভাবে জীবিত হয় তা নিয়ে নানা রহস্যের দানা বেঁধেছে। তাছাড়া নামজারির নোটিশ, নামজারির রিপোর্ট, জায়গার দলিল সহ অন্যান্য কাগজপত্রে তহশিলদার, সাব রেজিস্ট্রার, ডিড রাইটার, রেভিনিউ ইন্সপেক্টরের স্বাক্ষর রয়েছে এটা কিভাবে হল? রাজস্ব দপ্তরের এই আধিকারিকদের কি কোনো গাফিলতি রয়েছে না মোটা লেনদেনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ জালিয়াতি করে জায়গার দলিল বানানো হয়েছে তার তদন্ত প্রয়োজন’।

বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমের গোচরে আসতেই সংবাদকর্মীরা চুরাইবাড়ি তহশীল মৌজার তহশীলদারের কাছে গেলে তহশীলদার সন্তোষ চাকমা বির্তকিত মন্তব্যে জড়িয়ে পড়েন। তার বক্তব্য, ছিদ্দেক আলী উনার সামনে এসে স্বশরীরে টিপ সই দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল মৃত ব্যক্তি কিভাবে জীবিত হল ? তার উত্তর দিতে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়লেন সন্তোষ চাকমা।

ভুয়া দলিল করার অভিযোগে যে সমস্ত সরকারি অফিসারদের নাম উঠে আসছে তারা হলেন বাবুল মালাকার তৎকালীন রেভিনিউ ইন্সপেক্টর যার বিরুদ্ধে আরও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ডিড রাইটার অবন্তীরাম শব্দকর, তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার ও তহশিলদার সন্তোষ চাকমার নাম উঠে আসছে। এত বড় গাফিলতি হল কিভাবে ? নিশ্চয়ই কোন না কোন ভাবে তাদের কাছ থেকে অসৎ পথে সাহায্য নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ, তবে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ। এ বিষয়ে বর্তমান রেভিনিউ ইন্সপেক্টর আব্দুল জলিলের কাছে সাংবাদিকরা গেলে এবং নথিপত্র গুলি দেখানোর পর রেভিনিউ ইন্সপেক্টর আব্দুল জলিলেরও মনে হয়েছে কোথাও না কোথাও গাফিলতি হয়েছে।

এই ঘটনায় সবচেয়ে বড় বিষয়টি হল দলিল কিভাবে তৈরী হল ? সত্যিকারের যদি দলিল হয়ে থাকে তাহলে মৃত আব্দুল জলিলকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আসতে হবে এবং ক্যামেরায় ছবি উঠতে হবে তাহলে প্রশ্ন মৃত ব্যক্তি কিভাবে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে আসবে? বিষয়টি জানার জন্য সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা মহকুমা শাসক সুব্রত কুমার দাসের কাছে গেলে এসডিএম সুব্রত দাস নথিপত্র গুলি দেখে সাথে সাথেই তদন্তের নির্দেশ দেন। দলিল ও অন্যান্য কাগজপত্র গুলি দেখে মহকুমা শাসকের চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার উপক্রম। তিনি সংবাদ কর্মীদের বলেন, আপনারা বিষয়টি ধরার জন্য ধন্যবাদ আমি এবার তদন্ত শুরু করে দিচ্ছি। মহকুমাশাসক সুব্রত দাস জানান কিছুদিনের মধ্যেই তদন্তের রিপোর্ট বেরিয়ে আসবে নিশ্চয়ই কোন না কোন জায়গায় ভুল হয়েছে এবং যারা জড়িত তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

মহকুমা শাসকের কথা মত যদি তদন্ত হয় তাহলে এই ঘটনায় আরো বড় বড় রাঘব বোয়ালদের নাম উঠে আসতে পারে। বাম আমলে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দালাল চক্র ঘুঘুর বাসা বেঁধেছিল। সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন নথিপত্র বের করা হতো এমন কি জায়গার দলিল বের করা হতো তাতে জড়িত থাকতেন প্রশাসনিক আধিকারিকরাও । অভিযোগ তাদের প্রচ্ছন্ন মদতে এই জালিয়াতিমূলক কাজগুলি হয়ে যেত। এরা মৃতকে জীবিত আর জীবিতকে মৃত বানাতে পুরো ওস্তাদের বাপ । এখন দেখার, তদন্তের পর কারা কারা জালিয়াতির অভিযোগে ধরা পরে ।

error: Content is protected !!