ইসরোর সাফল্যের ইতিহাস, নাসা ও রসকসমসের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছায়ায়

বুধবার অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহারিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস স্টেশন থেকে জিএসএলভি এমকে-৩ ডি-২ লন্চিং ভেহিকেলের মাধ্যমে জিস্যাট২৯ উপগ্রহের সফল উৎক্ষেপণ করা হয় ।  এর সাথে সাথে ভারতীয় স্পেস সংস্থা ইসরো যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রযুক্তিতে অনন্য মাইলফলক স্থাপন করলো। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী এই উপগ্রহটি ভারতের জম্মু-কাশ্মীরসহ উত্তর পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলির যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে ইন্টারনেট পরিষেবাকে উন্নত ও সহজলভ্য করবে। ইসরোর বিজ্ঞানীদের একের পর এক সাফল্য অন্তৰাষ্ট্রীয় প্রযুক্তিকে বিশ্বের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলছে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পূর্বে মহাকাশ যুদ্ধে সোভিয়েত স্পেস প্রোগ্রামের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল মার্কিন স্পেস রিসার্চ সংস্থা নাসা। ষাটের দশক থেকে শুরু হয়ে এই লড়াইয়ের পত্যক্ষদর্শী ছিল সম্পূর্ণ বিশ্ব। যেখানে মহাকাশ গবেষণা থেকে শুরু করে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, চন্দ্র অভিযান , স্পেস স্টেশন ছিল মহাকাশের ক্ষমতা দখলের বিষয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর রাশিয়ার স্পেস রিসার্চ সংস্থা ‘রসকসমস’, নাসার একক আধিপত্যকে টক্কর দিতে পারেনি। আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়া রাশিয়া বিশ্বে সামরিক প্রভাব রাখতে পারলেও মহাকাশ গবেষণায় পিছিয়ে পরে।  যদিও তাদের সহায়তা ও প্রযুক্তিতে ভারতীয় স্পেস সংস্থার স্যাটেলাইট তৈরী করা হতো।

১৯৬৯ সালে বিক্রম সারাভাইয়ের নেতৃত্বে তৈরী হওয়া ভারতীয় স্পেস রিসার্চ সংস্থার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল , তৃতীয় বিশ্বের উন্নতিশীল দেশ হয়ে ভারত মহাকাশ গবেষণার মাধ্যমে অন্তর্দেশীয় সুরক্ষা ও সমাজে সাধারণ মানুষের উন্নতিত ঘটাবে। এই ভাবনায় প্রকাশ পাই বিক্রম সারাভাইয়ের মন্ত্যবে, “কিছু কিছু মানুষের মনে উন্নয়নশীল দেশের মহাকাশ গবেষণার কার্যক্রমের প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন আছে।কিন্তু আমাদের কাছে কোন দ্বিধা নেই। তথাকথিত অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন দেশগুলির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনো উদ্দেশ্য আমাদের নেই, আমরা চাঁদ বা গ্রহের সন্ধান করতেও ইচ্ছুক নই। কিন্তু আমরা দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, যদি আমাদের একটি অর্থপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়, তবে মানুষের ও সমাজের প্রকৃত সমস্যাগুলিকে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে সমাধান করতে হবে।”

ইসরোর তৈরী প্রথম স্যাটেলাইট ‘আর্যভট্ট’ সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় ১৯৭৫ সালের ১৯শে এপ্রিল উৎক্ষেপণ করা হয়।  তারপর থেকে আজ পর্যন্ত মোট ১০৭টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে ইসরো।

নাসার সাথে তুলনায় গেলে ইসরোর প্রতি বছরের বাজেট নাসার বাজেটের ৯.৪৪ শতাংশ। নাসার প্রতিবছরের বাজেট ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর ইসরোর ১.৭ বিলিয়ন মার্কিন দলের। ইসরোর ২০১৩ সালে মঙ্গলযান অভিযানের বাজেট ছিল ৭০ মিলিয়ন মার্কিন দলের যা  হলিউডের ‘গ্রাভিটি’ সিনেমার বাজেটের কম ছিল।  ইসরোর উৎক্ষেপণ খরচ কম হওয়ায় এখনো পর্যন্ত ২৮টি দেশের ২৩৯টি স্যাটেলাইটে উৎক্ষেপণ করেছে। ২০১৭ সালে পিএসএলভি সি৩৭ লন্চিং ভেহিকেলের মাধ্যমে একসাথে ১০১টি বিদেশী স্যাটেলাইটে উৎক্ষেপণের অনন্য কৃত্ব ইসরোর ঝুলিতে আছে।

পিএসএলভি (পোলার স্যাটেলাইট লন্চিং ভেহিকেল), জিএসএলভি (জিও-সিঙ্ক্রোনাইসিং লন্চিং ভেহিকেল) এর পর বুধবার জিএসএলভি এমকে-৩ ডি-২ লন্চিং ভেহিকেলের মাধ্যমে অন্যতম ভারী স্যাটেলাইট জিস্যাট২৯ (প্রায় ৩.৪ টন) উপগ্রহের সফল উৎক্ষেপণ, দেশের স্যাটেলাইট প্রযুক্তিকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল।

error: Content is protected !!