দুর্গাপূজার আগে ভিড়েদুর্গাপূজার-আগে-ভিড়ে-জমজ জমজমাট শেষ মঙ্গলাহাট, নাভিশ্বাস ক্রেতা-বিক্রেতার

কল্যাণ অধিকারী(হাওড়া) সপ্তাহ ঘুরলেই বাঙালির  শারদীয় উৎসব দুর্গাপূজা শুরু। তার আগে হাওড়া ময়দান জুড়ে বসেছে শেষ সাবেকী মঙ্গলাহাট। দূর দূরান্ত থেকে আসা হাজার-হাজার মানুষের ভিড়ে জমজমাট হাট চত্বর। পা ফেলার জায়গা নেই হাসপাতাল রোড থেকে শুরু করে হাওড়া গার্লস কলেজ মুখে পৌঁছানোর সোজা রাস্তা পর্যন্ত। ওদিকে সেতুর মুখ, এপাশে ময়দানের দিকেও বহু অস্থায়ী কাপড়ের দোকানের সামনেও ভিড়ে ঠাসা ক্রেতাদের।

হাওড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র ময়দান চত্বরে প্রাচীন মঙ্গলাহাটে বিক্রিবাট্টা হাটবারে জোড় কদমে হয়। জতুগৃহ বলে বার কয়েক শিরোনামে উঠে এসেছে। তবুও অস্থায়ী কাপড়ের দোকানের সংখ্যা ও মানুষের চাহিদা বেড়েই চলেছে। প্রশ্ন উঠেছে হাটের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিয়েও। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শপিং মল, ঝা চকচকে দোকান। তবুও সাবেকী মঙ্গলাহাটের জৌলুশ এতটুকু ফিকে হয়নি। পুজোর মুখে হাসনাবাদ থেকে, কেউ এসেছে হুগলী জেলার আরামবাগ থেকে। দিনান্তে বাড়ি ফিরেছেন জামা কাপড় বুচকি বেঁধে।

হাট উপলক্ষে সোমবার থেকেই প্রস্তুতি ছিলো তুঙ্গে । দুর্গা পুজোর আগে শেষ হাট, তার উপর সোমবার গেছে মহালয়া। বহু মানুষ এসেছিলেন গঙ্গায় তর্পণ সম্পন্ন করতে। ফেরার আগে কিছু কেনাকাটা সেরে নিয়েছেন। এবার হাটের অস্থায়ী কাপড়ের দোকান সোমবার থেকেই বসে গিয়েছিল। টাকি থেকে এসেছেন হাসান মোল্লা। টাকি বাজার এলাকায় কাপড়ের দোকান। পুজোর দুমাস আগে থেকে আসছেন মাল গস্ত করতে। বিপদ অনেক সময় ওতপেতে থাকে। বিশেষ করে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। গুছিয়ে ব্যাগে টাকা নিয়ে কেনাকাটা সেরেছেন। ফেরার আগে ব্যাগে রাখা মুড়ি খেয়ে বাস ধরবার জন্য পথ ধরেছেন।

চাঁপাতলা থেকে এসেছেন প্রশান্ত দাস।  মঙ্গলাহাটে  এসেছিলেন পরিবার নিয়ে। বড় মেয়ের জামাটা সাইজ নিয়ে একটু চিন্তায় ছিলেন । বলেছে না হলে পাল্টে দেবে। পুজোর সময় কি আর পাল্টাতে মন চাইবে। অসীমা রায়, শান্ত রায়, অষ্ট রায় সহ প্রায় তেরো জন এসেছেন ভোগপুর থেকে । এবারে দাম করে জামা কাপড় কিনতে না পেরে একটু মনমরা। কিভাবে কিনি! যা ভিড় দেখতে তো পাচ্ছেন। ঠিলে অন্য দোকানে নিয়ে চলে যাচ্ছে। জামাইয়ের প্যান্ট কিনতে গিয়ে দলের সাথে হাতছাড়া হয়ে যায়। যদিও কিছু পরেই সাক্ষাৎ হয়ে যায়।

তবে এত মানুষের ঠাসা ভিড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সেক্ষেত্রে কিভাবে উদ্ধার চালানো হবে? মঙ্গলাহাট ঢেলে সাজানোর কাজ বারেবারে শোনা গেলেও প্রশাসনের তৎপরতা মেলেনি। হাট চত্বর এলাকার মধ্যে অবস্থিত শরৎ সদনে প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। তবুও কোন হেলদোল নেই পুরসভার। প্রশাসনিক ফাইল আদানপ্রদানে আটকে নির্মাণ। এর ফাঁক গলেই রমরমিয়ে চলছে কারবার। আজিজুল ইসলাম জমিয়ে জামা কাপড় বিক্রি করছেন। ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানালেন, একটা দিনের হাট হলেও স্বপ্ন থাকে সপ্তাহভর। বাগড়ি আগুন মনে তে ছাপ ফেলেছে। তবুও বাবার হাত ধরে কারবার শুরু করেছি এখানে। এবারে বাজার আগের তুলনায় ভালো। তবে এত ভিড়ে বিক্রি করতে সমস্যা হচ্ছে।

 

হাটে আসা মানুষের যাতে কোনপ্রকার অসুবিধা না হয় সেজন্য পুলিশি নিরাপত্তা ছিল কঠোর। পুজোর সময় ভিন রাজ্য থেকে পকেট মার হাজির হয়। তাদের ধরতে ও অসাধুতার সুযোগ যাতে কোনও ব্যবসায়ী না নেয় সে কারণে সাদা পোশাকের পুলিশ হাটে ছিল। প্রস্তুত রাখা থাকে দমকল। এবারেও তার ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। কিন্তু ভিড় ঠেলে আদৌ পৌঁছাতে পারবে তো ঘটনাস্থলে এই প্রশ্ন’ই অনেকের কাছে!

error: Content is protected !!