দিব্যাঙ্গ বোনের ভাইফোঁটা

গৌতম পাল(রায়গঞ্জ)- বাঁহাতের কনিষ্ঠা অঙ্গুলি দিয়ে ভাইয়ের কপালে ভাইফোঁটা দিয়ে যমের দুয়ারে কাঁটা দেওয়া বোনেদের আজকের ভাতৃদ্বিতীয়ার দিনে প্রায় প্রতি ঘরে ঘরে। কিন্তু হাতের আঙ্গুলের বদলে বাঁপায়ের অঙ্গুলি দিয়ে ভাইদের কপালে ফোঁটা দিয়ে তার দীর্ঘায়ু কামনা করার দৃশ্য দেখা গেল রায়গঞ্জের রাঙাপুকুর গ্রামের মেয়ে স্কুল শিক্ষিকা শোভা মজুমদারের বাড়িতে । হ্যা, শোভার হাত দুটো জন্ম থেকেই অকেজো পঙ্গু। জীবনযুদ্ধে লড়াই চালানোর পাশাপাশি ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় পা দিয়েই ফোঁটা দিলেন তরুনী শিক্ষিকা শোভা । আর দিদির পায়ের ফোঁটা নিয়েই বছরের পর বছর আশীর্বাদধন্য হচ্ছে ভাইয়েরা ।

জন্ম থেকেই হাতদুটো পঙ্গু অকেজো উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের রাঙাপুকুর গ্রামের বাসিন্দা শোভা মজুমদারের । হতদরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বাবা সবজি বিক্রি করে প্রতিবন্ধী মেয়ে ও দুই ছেলেসহ পরিবার নিয়ে কোনওরকমে দিন গুজরান করেন । ছোটবেলা থেকেই মনে অদম্য জেদ নিয়ে কিছু করার জন্য জীবনযুদ্ধের লড়াই শুরু করে শোভা । হাতদুটো অকেজো কিন্তু পা তো স্বাভাবিক আছে। তাই পায়ের আঙ্গুলে পেন্সিল আঁকড়ে ধরে শ্লেটের উপর লেখা শুরু করল সে ।

এরপর একটু বড় হতেই খাতার উপর পা দিয়েই কলম চালানো শিখল শোভা । একদিকে দারিদ্রতার করাল অন্ধকার, অপরদিকে নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা । মনের জোরকে সম্বল করে প্রথম শ্রেনী থেকে এম এ পাশ করল সে । পা দিয়েই কম্পিউটার চালিয়ে ডিপ্লোমা অর্জন করল শোভা। পরিবারের দারিদ্রতা ঘোঁচাতে এরপর শুরু হল তার একের পর এক সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেওয়া । অবশেষে সাফল্য এলো তার জীবনে ।  রাঙাপুকুর প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শিক্ষিকার চাকুরি পেল রাজ্যের প্রতিবন্ধীদের রোল মডেল শোভা মজুমদার। পায়ের আঙুলে চক ধরে ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে আজ শোভা বিদ্যালয়ের কঁচিকাঁচাদের পাঠদান করছে। আর পায়ের আঙুল দিয়ে দুইভাই পার্থ আর বিকাশের কপালে ফোঁটা দিয়ে বছরের পর বছর বলে চলেছে ” ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যম দুয়ারে পরল কাঁটা “। দিদি শোভার কাছে এভাবে ফোঁটা নিতে পেরে নিজেদের গর্বিত বোধ করছে ছোট ভাই বিকাশ। তার কথায় দিদি আমাদের এতটাই ভালোবাসে যে হাত দিয়ে না পারলেও পা দিয়ে কপালে ফোঁটা দিয়ে আমাদের মঙ্গল কামনা করছে।

error: Content is protected !!