অসমে বাঙালিদের উপর হামলার নেপথ্যে কি রাজনীতির চোরা স্রোত! প্রতিবাদে ক্ষিপ্ত বাঙালি পথে

কল্যাণ অধিকারীঃ গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে গোলাপ এবং টিউলিপ ফুলের সুরভি দিয়ে গাঁথা ‘সহিষ্ণুতা’। পরিবেশকে আরো রঙিন করে দিয়েছে শরতের শেষে হেমন্তের আগমন।গায়ে যখন শীত করছে খুঁজছি উষ্ণতা, ঠিক সেই সময় পড়শি রাজ্য অসমের তিনসুকিয়ার বাঙালি পাড়ায়, রঙিন সহিষ্ণুতায় রক্তের ছিটে ছড়িয়ে দিল। ‘মৃত্যু’ নামক শব্দে ভোঁতা হয়ে গেল সহিষ্ণুতা।

কয়েক মাস আগের কথা নাগরিক পঞ্জি চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে অসম। ভরপুর রাজনীতি দেখতে থাকে রাজ্যটি। হাভাতে মানুষ গুলো যাদের নাম ওঠেনি চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিল আদৌ এই দেশ তাঁদের জন্যে তো? বৃহস্পতিবার রাতের গুলির শব্দ ও লুটিয়ে পড়া ‘লাশ’ আবারও চিন্তায় ফেলেছে। দেওয়ালের এ পারের রাজ্য-এর মুখ্যমন্ত্রী টুইট বার্তা পাঠিয়ে ঘটনায় ক্ষোভের পাশাপাশি পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু ওঁরা যাদের লক্ষ্য করে ট্রিগার চেপে দেওয়া হল তাহাদের কথা কারা ভাববে।

আলফা জঙ্গির দল ওখানকার এলাকা দাপায়। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ জি সহ বাকি প্রশাসনের কর্তাদের এ বিষয় অজানা কিছুই নয়। কিছু ঘটলে ওঁদের কে দোষী করা হবে এটাই বাস্তব। যদি সত্যি ওই আলফা দের ট্রিগার চাপা শব্দে মেরে ফেলা হয়েছে পাঁচ বাঙালি কে! তাহলে কঠিন সাজা দেওয়া হোক। দরকার পড়লে সেনা অভিযান চালিয়ে দোষীদের ধরে আনা হোক। তবে সবটাই হোক তদন্তের মধ্য দিয়ে। উঠে আসুক ওই ঘটনার নেপথ্যে কাদের আঙ্গুলি হেলন ছিল।

একটা দেশ প্রতি মুহূর্তে কর্পোরেট হবার চেষ্টায়। উন্নত নেট পরিষেবা। লাক্সারি জীবন যাপনের খোঁজ। ট্রেনে ফ্লেক্সি ফেয়ার’ ব্যবস্থা। মহাকাশ ভাবনা নিয়ে টেকনোলজির খোঁজ। পরিষেবা মূলক জায়গায় জিপিএস ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত। রাফেল যুদ্ধ বিমান চুক্তি। গ্লোবাল ট্যাক্স ট্রেন্ড। বহুজাতিক পণ্য প্রস্তুতকারী সংস্থার খোঁজ। এক কথায় উন্নয়নশীল দেশের চৌহদ্দিতে পৌঁছে দেওয়া। এতকিছু র পরেও জনজাতি মরছে দুষ্কৃতীদের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে। বন্দুকের নলে চারপাশ কাঁপিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে রক্ত। ওরা তখন নিষ্ঠুর অট্টহাসিতে যুদ্ধজয়ের প্রশস্তি নিয়ে এলাকা ছাড়ছে।

অসমে বাঙালি তাড়াও অভিযান বহু আগে থেকে শুরু হয়েছে। ৬০-এর দশকে প্রথম হামলা নেমে আসে। জখমের সংখা হার মানায় মৃত্যুর বীভৎসতা কে। কামরূপ জেলা, বরাক উপত্যকা এবার তিনসুকিয়ায় হামলা। মৃত্যু গুনছে ওরা। ভয়ে জড়সড় একটা আস্ত জেলা ছাড়িয়ে রাজ্য। কি হয় কি হয় ভাব। মৃত্যু কে সমর্পণ করবার আগের নিস্তবদা ছেয়ে। এসব কিছু মুখ বুজে সহ্য করা নয়। সোচ্চার ও প্রতিবাদের ভাষা তুলে ধরছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কে পথে নামিয়েছেন ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই।

নোটবন্দীর সময় প্রথম আন্দোলন করেছিলেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। অসমে পাঁচ বাঙালি হত্যার বিরুদ্ধে পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। একদিকে বাঙালি দের পাশে থাকার বন্দনা। অপরদিকে বিজেপি’র বিরুদ্ধে অল আউট আক্রমণ করা। বছর ঘুরলেই ব্রিগেড। বিরোধী ঐক্য মজবুত করতে এখন থেকেই আন্দোলন তীব্র করা। তার আগে বাঙালি হত্যার তীব্র সমালোচনা দিয়ে শুরু করলেন আগামীর প্রস্তুতি।

এভাবে হামলার কারণ কি? হতে পারে অসমীয়া দের মধ্যে বিভাজন শুরু করে দেওয়া। বারুদ মাখানো অন্ধকারে পাঁচ বাঙালির মৃত্যু রাজ্যের বিভিন্ন ঘরের দেওয়াল জুড়ে রক্ত মাখিয়ে দেওয়া। পূর্বের ক্ষত স্থানে আবারও আগুনের তাপ দেওয়া। জঙ্গি গোষ্ঠী নিজেদের প্রাণশক্তির জাগিয়ে তুলবার প্রচেষ্টা। হয়তোবা এর পিছনে রয়েছে কোন গভীর ষড়যন্ত্র। যা উনিশের আগে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলো!

তবে কেন্দ্র যে ঘটনা নিয়ে চিন্তিত তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এর কথায়, যারা হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here