ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে আওয়ামী লীগকে পুনর্নির্বাচিত করা খুবই জরুরি : শেখ হাসিনা

জুয়েল আনান্দ্(ঢাকা) : উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সমাপ্ত করার পাশাপাশি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগের পুনরায় ক্ষমতায় আসার প্রয়োজন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য ভোট প্রত্যাশা করে  একথা বলেছেন।বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশন পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানেই থেমে নেই, ২০২১ থেকে ২০৪১ পর্যন্ত আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। সেভাবেই বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো।’

তিনি এ সময় নদী মাতৃক বাংলাদেশের উন্নয়নে নেদারল্যান্ডের সহযোগিতায় প্রণীত শতবর্ষব্যাপী ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’র কথাও উল্লেখ করে বলেন, ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’-এর মাধ্যমে শতবর্ষে বাংলাদেশের কেমন উন্নয়ন হবে সেই পরিকল্পনাও আমরা গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী  বলেন, ‘এর জন্য দরকার আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা। আপনাদের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে- আজকে যেসব উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি সেগুলো বাস্তবায়ন করা, বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আরো ব্যাপকভাবে উদযাপন করার জন্য এবং জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা নৌকা মার্কায় ভোট চাই।’

তিনি বলেন, ‘এই ১০ বছরে বাংলাদেশে দারিদ্রের হার ৪০ ভাগ থেকে ২১ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আগামী নির্বাচনে, পূর্বে যেভাবে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন তেমনি আগামীতেও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে এই দারিদ্র সীমা আমরা যেন আরো ৫/৬ ভাগে নিয়ে আসতে পারি তার জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।’ শেখ হাসিনা এ সময় নৌকায় ভোট প্রদানের জন্য জনগণের ওয়াদা কামনা করলে উপস্থিত জনতা দু’হাত তুলে এবং মুহুর্মুহু করতালির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর আহবানের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় উপস্থিত জনতার প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, আমি শুধু এটুকুই বলবো আমার কোন চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আপনাদের সেবা করা আমার কাজ। কাজেই আপনাদের কাছ থেকে সহযোগিতা চাই এবং সকলে সুন্দরভাবে বাঁচবেন, উন্নত জীবন পাবেন সেটাই আমরা চাই।

তিনি বলেন, আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবো। ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়কে মুজিব বর্ষ হিসেবে আমরা ঘোষণা দিয়েছি। এরমধ্যেই বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলাদেশ।  প্রধানমন্ত্রী সার্কিট হাউজ ময়দানে সমাবেশের মঞ্চে ওঠার পূর্বে নতুন বিভাগীয় এ শহরে বিভিন্ন দপ্তরের ভিত্তিফলক স্থাপন, শহরের কেওয়াটখালিতে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর সেতু নির্মাণ, বিভিন্ন এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন, নতুন ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণসহ জামালপুর, শেরপুর ও নেত্রকোণার ১৯৫টি উন্নয়ন প্রল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি এ সময় জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদও উপস্থিত ছিলেন।

এদিনের সমাবেশে ছিল উপচে পড়া ভিড়। এই সমাবেশে যোগ দিতে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য সকাল থেকেই হাজারো জনতা, বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে-গেয়ে সার্কিট হাউজ মাঠে এসে জড়ো হয়। অনেকের হাতেই ছিল রং-বেরংয়ের ব্যানার, ফেস্টুন এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার প্রতিকৃতি।

তরুণ ও যুব সমাজই আমাদের শক্তি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার প্রাইমারী লেভেল থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত ২ কোটি ৪ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি এবং উপবৃত্তি দিয়ে যাচ্ছে। ১ কোটি ৪০ লাখ প্রাইমারী স্কুলের শিশুদের উপবৃত্তির টাকা প্রতিমাসে মায়ের হাসি প্রকল্পের মাধ্যমে মোবাইল ফোন মারফত মায়েদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেক এলাকায় ডিজিটাল সার্ভিস, ব্রড ব্যান্ড তাঁর সরকার চালু করেছে এবং মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ জয় করেছে।

তিনি বলেন, দেশব্যাপী সরকার স্থাপিত ডিজিটাল সেন্টারের সুযোগ গ্রহণ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলে-মেয়েরা ঘরে বসেই বিদেশ থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারছে। তাঁর সরকারের সময় বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেওয়ায় আজ সকলের হাতেই মোবাইল ফোন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকারে আসে তখনই আমরা সকলের হাতে এই মোবাইল ফোন পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি। আজকে তাই আধুনিক প্রযুক্তি আপনাদের হাতে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা, মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম স্থাপন, কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়ে চিকিৎসা সেবা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি বয়স্ক ও বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ সম্মানী ভাতা প্রদানের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ।

তিনি বলেন, ‘সমাজে কেউ বাদ থাকবেনা, সকলেরই উন্নয়ন হবে। এই চিন্তা নিয়েই আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করি। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।’ সকলের সমোন্নয়ন নিশ্চিত করাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি মানুষও গৃহহীন থাকবেনা। সকলকে আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্প, আদর্শ গ্রাম, গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর-বাড়ি করে দিচ্ছি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here