ইসরোর জিএসএলভি এমকে-৩ ডি-২ / জিস্যাট২৯ মিশনের সম্পূর্ণ তথ্য

ওয়েবডেস্ক: বুধবার বিকাল ৫টা বেজে ৮ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহারিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস স্টেশন থেকে জিএসএলভি এমকে-৩ ডি-২ লন্চিং ভেহিকেলের মাধ্যমে জিস্যাট২৯ উপগ্রহের সফল উৎক্ষেপণ করা হয়। জিএসএলভি এমকে-৩ ডি-২ এর প্রথম ডেভেলপমেন্ট মিশন ২০১৭ সালের ৫ই জুন করা হয়েছিল।এটি তার দ্বিতীয় মিশন। প্রথম মিশনে জিস্যাট ১৯ স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করে। দ্বিতীয় মিশনের সাফল্যের পর একে অপারেশনাল উড়ানে পিএসএলভি ও জিএসএলভির সাথে নিযুক্তি হবে।

জিএসএলভি এমকে-৩ ডি-২ সম্পর্কে কিছু তথ্য:

১) ভারতের অন্যতম ভারী ওজন বহনে সক্ষম উৎক্ষেপণ যন্ত্র।

২) জিও ট্রান্সফার কক্ষপথ পর্যন্ত ৪ টন ওজন এবং নিচের কক্ষপথে ১০ টন ওজনের স্যাটেলাইট বহনে সক্ষম।

৩) ২টি শক্তিশালী এস ২০০  এবং একটি করে এল ১১০ লিকুইড কোর স্টেজ ও সি২৫ লিকুইড ক্রায়োজেনিক স্টেজ মোটর দিয়ে তৈরী।

জিস্যাট২৯ সম্পর্কে কিছু তথ্য:

১) ভারতের অত্যন্ত আধুনিক কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট।

২) এটি মাল্টি ব্যান্ড (কা ও কু), মাল্টি বিম স্যাটেলাইট।

৩) এর ওজন ৩৪২৩ কেজি (প্রায় ৩.৪ টন) ।

সম্পূর্ণ মহাকাশযানটি সম্পর্কে তথ্য:

উৎক্ষেপণ যন্ত্রটির (লঞ্চ ভেহিকেল) দুই পাশে ২৬.২ মিটার লম্বা ও ৩.২ মিটার চওড়া দুটি এস২০০ বুস্টার আছে।  যার প্রত্যেকটির বহন ক্ষমতা ২০৫ টন। এস২০০ পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম সলিড রকেট মোটর।মধ্যবর্তী অংশটিতে আছে ১১৬ টন বহনে সক্ষম এবং  ২১.৪ মিটার লম্বা ও ৪ মিটার চওড়া এল১১০ কোর স্টেজ। যার নিম্নবর্তী অংশে দুটি শক্তিশালী বিকাশ ইঞ্জিন আছে। উপরিবর্তী অংশে আছে ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরী ১৩.৫ মিটার লম্বা সি২৫ ক্র্যজনিক ইঞ্জিন। এর মধ্যে রয়েছে ২৮.৬ কেজির তরল হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন। যেটি রকেটটির জ্বালানিকে দীর্ঘস্থায়ী হতে সাহায্য করে। উৎক্ষেপণ যন্ত্রটির সম্পূর্ণ উপরিভাগে আছে জিস্যাট২৯ আবদ্ধ ৫ মিটার চওড়া স্পেসক্রাফট বা মহাকাশযান।

জিস্যাট২৯-এর কক্ষপথে স্থাপনের প্রক্রিয়া:

১) জিএসএলভি এমকে-৩ ডি-২ উৎক্ষেপণ যন্ত্রটি এস২০০ বুস্টারের দ্বারা ভূপৃষ্ঠ থেকে উৎক্ষেপিত হবে।

২) উৎক্ষেপণের  ১৪০ সেকেন্ড পরে মহাকাশযানটি পৃথিবীর বায়মন্ডলের বাইরে পৌঁছনোর পর দুটি বুস্টার মূল যন্ত্রটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।

৩) উৎক্ষেপণের ২২৫ সেকেন্ড পর মহাকাশযানের সামনে পে লোড ফেয়ারিং অর্থাৎ  জিস্যাট২৯ স্যাটেলাইটটির আবৃত অংশটি খুলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

৪) উৎক্ষেপণের ৩১৭ সেকেন্ড পরে লিকুইড কোর স্টোরেজ অর্থাৎ  জ্বালানি সংরক্ষণের অংশটি মূল যন্ত্রটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।

৫) এর ২ সেকেন্ড পরে সি২৫ ক্র্যজনিক ইঞ্জিনটি ১০ মিনিট ধরে জিস্যাট২৯ স্যাটেলাইটটিকে তার কক্ষপথের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য জ্বালানি সরবরাহ করবে।

৬) অবশেষে উৎক্ষেপণের ৯৬৫ মিনিট পরে জিস্যাট২৯ স্যাটেলাইটটিকে তার কক্ষপথে পৌঁছে দিয়ে  সি২৫ ক্র্যজনিক ইঞ্জিনটি কাজ করা বন্ধ করে দেবে এবং স্যাটেলাইট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

৭) কক্ষপথে পৌঁছনোর পর  জিস্যাট২৯ পৃথিবীকে উপবৃত্তাকার প্রদক্ষিণ করবে। পৃথিবী থেকে তার সব চেয়ে কম দূরত্ব হবে ১৯০ কিলোমিটার  এবং সবচেয়ে বেশি দূরত্ব হবে ৩৫,৯৭৫ কিলোমিটার।

৮)এরপর  জিস্যাট২৯-কে নিয়ন্ত্রণ করবে ইসরোর স্যাটেলাইট মনিটর কেন্দ্র এমসিএফ হাসান। স্যাটেলাইটটি তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছে যাবার পর তার সোলার প্যানেল ও টেলিকমিউনিকেশন এন্টেনা খুলে যাবে এবং ভারতের উত্তর অংশে ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় তরঙ্গ সরবরাহ করবে।

বুধবারের স্যাটেলাইট মিশনের লক্ষ্য ছিল, ভারত ভূ-ভাগের উত্তরে অবস্থিত জম্মু-কাশ্মীর, উত্তর পূর্বাংশে ত্রিপুরা, আসাম,সিকিম, মনিপুর,নাগাল্যান্ড মেঘালয়, মিজোরাম ও অরুণাচল প্রদেশের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে ইন্টারনেট পরিষেবা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। দেশের সীমান্তবর্তী স্থানে বসবাসকারী ভারতবাসীদের প্রতিদিন সন্ত্রাসবাদী সহ পাকিস্তানের নৃশংসতার সম্মুখীন হচ্ছে। এক্ষেত্রে  স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে, মানুষের আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রশীল ভূমিকা গ্রহণ করবে।

error: Content is protected !!