প্রাক্তন বিধায়কের ভাইয়ের বিরুদ্ধে দলের নাম ভাঙিয়ে তোলাবাজির ও মারধরের অভিযোগ

হক জাফর ইমাম(মালদা) প্রাক্তন বিধায়কের ভাইয়ের বিরুদ্ধে দলের নাম ভাঙিয়ে তোলাবাজির ও মারধর করে ছুরিবিদ্ধ করার অভিযোগ। শনিবার চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে মালদা হরিশ্চন্দ্রপুর থানার ব্লক অফিস সংলগ্ন গেস্ট হাউসে। রাতেই গুরুতর জখম ওই তৃণমূল নেতা নজিবুর রহমানকে (৪৪) মালদা শহরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে । দুষ্কৃতীদের হামলায় ওই তৃণমূল নেতার বাম পা এবং দুই হাত ভেঙে গিয়েছে। শরীরের একাধিক জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।
এদিকে তৃণমূল নেতাকে খুনের চেষ্টার ঘটনায় মালদা হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় প্রাক্তন বিধায়ক তাজম্মুল হোসেনের ভাই জম্মুর রহমান তার এক সাগরেদ আশরাফুল শেখ সহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আক্রান্তের স্ত্রী মাম্পি খাতুন অভিযোগ দায়ের করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত তৃণমূল নেতা নজিবুর রহমানের বাড়ি মালদা হরিশ্চন্দ্রপুর থানার মালিওর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অর্জুনা গ্রামে।‌ হরিশ্চন্দ্রপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির করমার্ধ‍্যক্ষ পদে ছিলেন নজিবুর রহমান। বর্তমানে তিনি জেলা পার্টির সদস্য এবং হরিশচন্দ্রপুরের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা হিসাবে পরিচিত। নজিবুর রহমানের স্ত্রী মাম্পি খাতুন হরিশ্চন্দ্রপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন খাদ্য করমাধ‍্যক্ষ পদে ছিলেন । বর্তমানে তিনি ব্লকের তৃণমূল নেত্রী হিসাবে পরিচিত।
পুলিশকে অভিযোগে ওই তৃণমূল নেতার স্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মাম্পি খাতুন জানিয়েছেন, জম্মুর রহমান নিজেকে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের তৃণমূল নেতা বলে দাবি করে আসছে । বিভিন্ন ভাবে পার্টির সদস্যদের কাছে হুমকি দিয়ে, ভয় দেখিয়ে তোলা আদায় করছে। কাউকে আবার ব্লক সভাপতি অথবা পঞ্চায়েত সমিতির করমাধ‍্যক্ষ পদ দেওয়ার টোপ দিয়েও লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করছে । এছাড়াও কয়েক মাস আগে নজিবুর রহমানের কাছ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা নিয়েছিল জম্মুর রহমান । সেই টাকা দিচ্ছিল না । এমনকি পার্টির বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ উঠেছিল। এনিয়ে নজিবুর রহমান প্রতিবাদ করেছিলেন।‌ তারই জেরে পরিকল্পনা করে আমার স্বামীকে খুনের চেষ্টা চালানো হয়।
তৃণমূল নেত্রী মাম্পি খাতুনের অভিযোগ, জম্মুর রহমান মালদা হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তাজম্মুল হোসেনের ভাই। তিনি কোন পার্টি করেন না । অথচ তৃণমূলের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় গুন্ডামী চালিয়ে যাচ্ছে । ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে দলের নেতাকর্মীদের। এনিয়েই নজিবুর রহমান প্রতিবাদ করেছিলেন। শনিবার রাতে মিটিং -এর কথা বলে স্বামী নজিবুর রহমানকে ব্লক অফিসের পাশের গেস্ট হাউসে ডেকে নিয়ে যায় জম্মুর রহমান, তার সাগরেদ আশরাফুল শেখ সহ দলবল। এরপরই নজিবুর রহমানের উপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে চড়াও হয় তারা। গুরুতর জখম হওয়ার পর কোন ক্রমে গেস্ট হাউস থেকে পালিয়ে বাঁচেন নজিবুর রহমান। রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় এসে পড়েন নাজিবুর রহমান। এরপরই তার আর্ত চিৎকারে লোকজন ছুটে আসলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায় । রাতে স্বামীকে মালদার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে।
এদিকে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই জম্মুর রহমান এবং আশরাফুল শেখকে ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায় নি। জম্মুর রহমানের দাদা তথা হরিশচন্দ্রপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তাজমুল হোসেন বলেন , ওই দিনের হামলার ঘটনার সময় আমার ভাই ছিল না। তৃণমূলের জেলার একটি মিটিং নিয়ে আমরা প্রত্যেকে ব্যস্ত আছি । এখন পুরনো কোনো শত্রুতার জেরে হয়তো নজিবুর রহমানের সাথে কারোর কোন রকম গোলমাল হয়ে থাকতে পারে। তবে কারা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা বলতে পারবো না । নজিবুর রহমানের স্ত্রী যে অভিযোগ করছেন তা পুরোটাই ভিত্তিহীন।
দলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন জানিয়েছেন, হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের তৃণমূল নেতা নজিবুর রহমানের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি । কারা এই ঘটনাটি ঘটলো তার প্রকৃত তদন্তের জন্য পুলিশকে জানানো হয়েছে।
হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জীব বিশ্বাস জানিয়েছেন, পুরো ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে । অভিযুক্তদের খোঁজ চালানো হচ্ছে।

error: Content is protected !!