রায়গঞ্জ শহরের পুজো পরিক্রমা ডাকবার্তার ক্যামেরায়

গৌতম পাল(রায়গঞ্জ) কলকাতার পাশাপাশি এবার বিভিন্ন জেলাকেও টেক্কা দিচ্ছে উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ। অনান্য বারের তুলনায় এবছর শহরের প্রতিটি মন্ডপে দেখা গেছে থিমের ছোঁয়া।  রায়গঞ্জ রবীন্দ্র ইনস্টিটিউটের ৪৯ তম বর্ষে এবারের থিম নারী শক্তি। বিভিন্ন বিভাগে নিজের নিজের ক্ষেত্রে শীর্ষে পৌছে যাওয়া নারীদেরকে সম্মান প্রদর্শন করে মণ্ডপজুড়ে তাদের ছবি সাজিয়ে রেখেছে উদ্যোক্তারা। ঝাঁসির রানী লক্ষীবাই, ইন্দিরা গান্ধী, কল্পনা চাওলা, মমতা বন্ধোপাধ্যায় সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের নাম উজ্জ্বল করা নারীরাই মা দূর্গার সঙ্গে অধিষ্ঠিত রয়েছেন মণ্ডপে। বাঁশ ও বেতের সুদৃশ্য কাজে মণ্ডপটি ইতিমধ্যেই রায়গঞ্জ সহ সমগ্র উত্তর দিনাজপুরের মানুষের কাছে অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। পঞ্চমীতে উদ্বোধন হওয়ার পরই রাত থেকেই কচিকাঁচা থেকে সব বয়সীরা ভিড় জমাচ্ছেন এই মণ্ডপে। প্রতি বছর নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে হাজির হয় উদ্যোক্তারা।এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সাড়ে সাতলক্ষ টাকা বাজেটের এই পুজোয় ভারতীয় নারীদের মধ্যে উন্নতির শিখরে পৌছে যাওয়া মহিলাদের তুলে ধরা হয়েছে।বাশ-পাটের হস্তশিল্পের কাজে গড়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপ।

রায়গঞ্জ রবীন্দ্র ইনস্টিটিউটের পুজো মন্ডপ

অপরদিকে কলকাতার পুজোর সাথে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলা তথা উত্তরবঙ্গের অন্যতম সেরা পুজো উপহার দিয়ে থাকে রায়গঞ্জ শহরের সুদর্শনপুর সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির  দূর্গাপুজো । ২২ লক্ষ টাকা বাজেটের এই পুজোয় এবারের চমক এক বিশালাকার সুদৃশ্য কাল্পনিক রাজপ্রাসাদের আদলে পুজোমন্ডপের পুজো উদ্বোধনে হয়েছে রায়গঞ্জের অনাথ শিশুদের হাত দিয়ে। উদ্বোধনের দিনেই অনাথ দুস্থ শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে নতুন পোশাক।

জেলার তথা উত্তরবঙ্গের অন্যতম সেরা পুজো রায়গঞ্জ শহরের সুদর্শনপুর সার্বজনীন দূর্গাপুজো । শুধু রায়গঞ্জ বা জেলার দর্শনার্থীরাই নয়, ভিন জেলার দর্শনার্থীদের কাছেও আকর্শন থাকে এই পুজোর । এবারে সুদর্শনপুর সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজো ৬৯ তম বর্ষে পদার্পন করেছে । কোনও নেতা মন্ত্রী বা বিশিষ্ট ব্যাক্তিকে দিয়ে নয়, এবারের পুজো উদ্বোধন করেছে রায়গঞ্জের অনাথ শিশুরা । বালুরঘাটের শিল্পী দিয়ে তৈরি বিশালাকার সুদৃশ্য রাজপ্রাসাদ পুজোমন্ডপ এবারেও দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে বলে আশা পুজো কমিটির কর্মকর্তাদের। হিলির মৃৎশিল্পীর হাতে তৈরি মৃন্ময়ীর অপরূপ মূর্তি বরাবরই দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। সুদর্শনপুর সার্বজনীনের দূর্গাপুজো অন্যতম আকর্ষন থাকে ডিজিটাল আলোকসজ্জা। চন্দননগরের আলোকশিল্পীদের নানান কারুকার্যে ভরিয়ে দেবে গোটা পুজোমন্ডপ।


                                             সুদর্শনপুর সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজো মন্ডপ

চল্লিশ বছর পর আবার রায়গঞ্জে মাটির নীচে কৃত্রিম গুহায় দশভূজা দর্শন করলেন রায়গঞ্জ তথা উত্তর দিনাজপুর জেলাবাসী । রায়গঞ্জের তুলসীতলার সমসজ সেবক সংঘের ” প্রলয় সৃজন ” থিমের দূর্গা প্রতিমা এবারে দেখতে হচ্ছে গুহার ভেতরে প্রবেশ করে। পাশাপাশি থাকছে কেদারনাথ মন্দিরের আদলে পুজো মন্ডপে দেবী দূর্গার আরাধনা। রায়গঞ্জের দূর্গাপুজোয় থিম পুজো উপহারে বরাবরই চমক দিয়ে থাকে তুলসীতলার সমাজ সেবক সংঘের পুজো। এবারে তাদের থিম ” প্রলয় সৃজন “।  সমাজ সেবক সংঘের পুজো মন্ডপের মাঠে প্রবেশ করতেই চোখে পরছে বিশালাকার পাহাড়ের মাথায় বসে রয়েছে দেবাদিদেব মহাদেব। সারা মাঠ জুড়ে থাকবে শিবের অসংখ্য ত্রিশূল, রুদ্রাক্ষ, ও শঙখ। কিছুটা এগোতেই আপনাকে দেবী দূর্গার দর্শন পেতে প্রবেশ করতে হবে গুহাতে। গুহায় প্রবেশ করে দেবী দর্শন করে বেড়িয়ে এসেই দর্শন করা যাবে কেদারনাথ মন্দিরের আদলে পুজো মন্ডপ।

সমাজ সেবক সংঘের পুজো মন্ডপ

আফ্রিকা মহাদেশের আদিবাসীদের জীবন সংস্কৃতি তার সাথে ভারতীয় আদিবাসীদের সংস্কৃতির অনেকটা মিল আছে ,  সেই  থিমকে বেছে নিয়ে পুজো মণ্ডপ তৈরী করছে উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জের নসিরহাট হরিহরপুর সার্ব্বজনীন দূর্গা পূজা কমিটি। এবারে ৪৯তম বর্ষে পর্দাপন করেছে এই দূর্গাপূজা । এবারে থিম হিসাবে এই আফ্রিকার জঙ্গলে বাস করা মানুষদের তুলে ধরা হয়েছে । এই থিম নির্ভর মণ্ডপ গড়ছেন মালদায় শিল্পীরা । দেবী মৃনময়ীকে দেখা গিয়েছে আদিবাসী সাজে। চন্দন নগরের মতোই ডিজিটাল আলোক সজ্জ্বা ,দায়িত্বে আছে কালিয়াগঞ্জের আলোক শিল্পী । তাদের পূজো মন্ডপ তৈরী হচ্ছে প্লাই বোর্ড ,থার্মকল সহ ফেলে দেওয়া সামগ্রী সহ মটর সাইকেলের টায়ার দিয়ে ।  বাজেটের নিরিখে মাঝারি হলেও এই থিম নির্ভর পূজা মানুষের আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দুতে থাকবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

নসিরহাট হরিহরপুর সার্ব্বজনীন দূর্গা পূজা মন্ডপ
error: Content is protected !!