আগরতলা ও কলকাতাঃ ত্রিপুরা-বাংলা ভাই বোন। ২০১৬ সালে রাজধানীর স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্ধোপাধ্যায়। কিন্তু সে সব আজ অতীত । ত্রিপুরার তৃনমূল আজ আর নেই, টিম টিম করে জ্বলছে বাতি। পতাকা ধরার লোক নেই সেই রাজ্যে। কিন্তু তার মধ্যেও সংঘাতে জড়ালেন দুই প্রতিবেশী রাজ্যের সরকারি আমলারা, সৌজন্যে বাংলায় বিজেপির রথযাত্রা। লোকসভা ভোটের আগে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে দেড়মাস ব্যাপী রথযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল বঙ্গ বিজেপির পক্ষ থেকে। ৭ ডিসেম্বর কোচবিহার থেকে শুরু হওয়ায় কথা ছিল রথযাত্রার। রাজ্যে আসার কথা ছিল বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের। কিন্তু আদালতের রায়ে সেই রথযাত্রা এখন বিশবাঁও জলে। কিন্তু তার মধ্যেই সংঘাত জড়িয়ে গেলো ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ।
ত্রিপুরা সরকারের শীর্ষ আমলারা ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের কোচবিহার সফর নিয়ে কোচবিহার জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে বাংলার মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠালেন ত্রিপুরার মুখ্যসচিব এল কে গুপ্তা।
যেকোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জেড প্লাস ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। সেই মত ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের জন্য আসন্ন কোচবিহার সফরের জন্য আগাম নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে ত্রিপুরার এক পুলিশ আধিকারিক অ্যাডভান্স সিকিউরিটি লিয়াজোঁ (এএসএল) কোচবিহারে এসেছিলেন। কিন্তু ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হয়েছে কোচবিহার পুলিশ প্রশাসন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে কোনও কথাই বলেননি। আর এরপরেই শুরু হয়েছে চাপানোত্তর।
আর এই অভিযোগ তুলে ত্রিপুরার মুখ্যসচিব এল কে গুপ্তা চিঠি লিখেছেন বাংলার মুখ্যসচিব মলয় কুমার দে-কে। সেই চিঠিতে মুখ্যসচিব লিখেছেন, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর সফর নিয়ে যখন রাজ্যের তরফে কোচবিহার প্রশাসনের সাথে পরিবহণ সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে যাওয়া হয়, তখন জেলা প্রশাসনের কেউ কোনও কথাই বলেননি। ত্রিপুরা পুলিশের ডিজি এ ব্যাপারে যে রিপোর্ট দিয়েছেন তা ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে নবান্নে। যদিও রবিবার হওয়ায় নবান্নের পক্ষ থেকে ত্রিপুরা সরকারের চিঠির বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।
বাংলার একটি ওয়েব সংবাদ মাধ্যম থেকে পাওয়া সূত্রে জানা গেছে এই বিষয়ে কোচবিহারের পুলিশ সুপারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানিয়েছেন, “চিঠির ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। আমার উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা যদি কিছু রিপোর্ট চান, তখন তাঁদের যা রিপোর্ট দেওয়ার দেব।”
আর এখানেই উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। বিপ্লব কুমার দেবের পরিচয় তিনি ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সেই মোতায়েক জেট ক্যাটাগরির নিরাপত্তা তিনি পেয়ে থাকেন। তাহলে কেন মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রশাসন এই বিষয়ে ত্রিপুরার আমলাদের সহায়তা করলেন না? কেন দ্বিচারিতা করলেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি শাসিত কোন রাজ্যে গেলে একই ধরনের নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। তাহলে বিপ্লব দেবের ক্ষেত্রে দ্বিচারিতা কেনো? বিজেপি দলের মুখ্যমন্ত্রী বলে? অনেকে আবার এও বলছেন যে নিরাপত্তার ব্যপারে সৌজন্যতাবোধ দেখাতেই পারত নবান্ন। আবার কানাঘুষো এও শোনা যাচ্ছে যে, “এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। যেখানে অনুব্রত মণ্ডলের জন্য থাকবে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা আর একটা অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা থেকে যাবে প্রশ্ন চিহ্নের মুখে।”