স্যোশাল মিডিয়ায় আসছিলো অভিযোগ, তারপর……………

হক জাফর ইমাম(মালদা) ডেঙ্গু ছড়ানো মশার দীর্ঘদিনের আঁতুড়ঘর ভাঙতে ফেসবুকেই কাতর আবেদন গ্রামবাসীদের । আর সেই আবেদন নজরে আসতেই নজিরবিহীন ভাবে অতি দ্রুততার সহিৎ ব্যবস্থা নিলেন জেলার জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য । মালদা কালিয়াচকের আলিপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকায় বছরের পর বছর পরিস্কার না হওয়া নর্দমায় বংশবিস্তার করে চলা মশাদের ডেরা তছনছ করতে জেলাশাসকের নির্দেশে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় শুরু হল অভিযান। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ গ্রামবাসীরা মুক্তকণ্ঠে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন ফেসবুক এবং জেলাশাসককে।

উল্লেখ্য, গত বছর বিধবংসী বন্যার পরেই মারণ ডেঙ্গুর দাপটে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল জেলার শহর থেকে গ্রাম । মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে বেসরকারি নার্সিংহোম – সর্বত্রই অজানা জ্বরের আক্রমণে কাঁপতে থাকা মানুষের ভিড়ে ছিল ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই রব । ঘুম উড়ে গিয়েছিল জেলা প্রশাসন থেকে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্তাদের । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তাই এ বছর বর্ষার শুরু থেকেই ডেঙ্গু রুখতে সম্ভাব্য সব রকম সাবধানতা নেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের সর্বস্তরে। একের পর এক বৈঠকে সতর্ক করা হয়েছে পুরসভা থেকে পঞ্চায়েতের সব স্তরকেই।

এমন পরিস্থিতিতেই জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্যের নজরে পড়ে ফেসবুকে মহম্মদ সানিউল খানের একটি পোস্ট। জনপ্রিয় এই সোস্যাল মিডিয়ামের মাধ্যমে গ্রামবাসীদের পক্ষে সানিউল জানান মালদা কালিয়াচক – ১ ব্লকের আলিপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শেরশাহি বাজার সংলগ্ন গ্রাম, আগামিল্কি এবং কাজিগ্রামে ডেঙ্গুর প্রবণতা বেড়ে চলেছে । সকলকে সাবধানতা অবলম্বন করার অনুরোধ জানিয়ে শেরশাহি চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দারা প্রশাসনকে ফেসবুকের মাধ্যমেই জানান জনৈক আব্দুল আলিমের বাড়ি থেকে হাজি আজাদের বাড়ি পর্যন্ত সরকারি ড্রেনটি বিগত ১৫ বছরে একবারও পরিস্কার না হওয়ায় মশাদের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত হয়েছে । সেখান থেকেই মারন ডেঙ্গু ছড়াতে পারে এই আশঙ্কা জানিয়ে সানিউলের মাধ্যমে প্রশাসনকে পদক্ষেপ করার অনুরোধ করা হয় ওই ফেসবুক পোস্টে।

                                                         এই সেই ফেসবুক পোস্ট

২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওই ফেসবুক পোস্ট লক্ষ্য করেন জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য । এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে তিনি কথা বলেন কালিয়াচক-১-এর বিডিও সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে । জেলাশাসকের নির্দেশ পেয়েই শেরশাহী অঞ্চলে পৌঁছে যান বিডিও নিজেই । তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় ২৫০ মিটার দীর্ঘ ওই নালা পরিস্কারের কাজ।

সোস্যাল মিডিয়ায় একটি মাত্র পোস্টে  জেলাশাসক থেকে বিডিও’র এই দ্রুত পদক্ষেপে চমকে যান স্থানীয় বাসিন্দারাও । ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রশাসনকে পাশে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন কয়েক’শ মানুষ। তারা বলেন, জেলাশাসক যেভাবে পদক্ষেপ করেছেন তাতে আমরা মুগ্ধ। এমন সক্রিয়তা থাকলে মালদহ সম্পূর্ণ ডেঙ্গুমুক্ত থাকবে বছরভর।

জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য অবশ্য বিষয়টিকে প্রশাসনিক দায়বদ্ধতা বলেই ব্যাখ্যা করেছেন । তিনি বলেন, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য প্রাশাসনের নির্দেশে জেলার সর্বত্র ডেঙ্গু রুখতে বদ্ধপরিকর জেলা প্রশাসন। সামান্য কিছু সমস্যা কোথাও কোথাও থাকতেই পারে। তবে যখনই এমন কিছু নজরে এসেছে, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষ তাদের সমস্যা আমাদের নজরে এনেছেন। ধন্যবাদ প্রাপ্য আসলে তাদেরই।

error: Content is protected !!