যারা সুভাষকে বিদ্রুপ করেছিলেন তারাই আজ সব থেকে বড় ধার্মিক

শুভঙ্কর মুখার্জিঃ “‘আমি প্রথমে হিন্দু, তারপর ব্রাহ্মণ, তারপরে পার্টির”। তারাপীঠ মন্দিরে পুজো দেওয়ার পর একথা বলেছিলেন প্রাক্তন ক্রিয়া ও পরিবহন মন্ত্রী প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতা সুভাষ চক্রবর্তী। সুভাষ চক্রবর্তী বরাবরই ছিলেন একজন ব্যাতিক্রমি কমিউনিস্ট নেতা। বাম আমলে একদিকে যেমন ছিলো তাঁর দাপট তেমনি বরাবরই বিতর্কের শিরোনামে উঠে এসেছিলো প্রয়াত নেতার নাম। কমিউনিস্ট হয়েও পুজো দিতে ছুটে যেতেন তারাপীঠ সহ বিভিন্ন মন্দিরে । যা নিয়ে সেই সময় বিতর্ক কম হয়নি । কিন্তু তিনি ছিলেন নিজের স্টাইলেই, চলতেন নিজের খেয়াল খুশীতে । রেয়াত করতে না দলের শীর্ষ নেতৃত্বদের । সেইসময় তারাপীঠে পুজো দেওয়ার পর জ্যোতি বসু পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছিলেন সুভাষের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। প্রত্যুত্তরে সুভাষ বলেছিলেন, “আমি যখন পাগল, আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে, তা হলে আমাকে দলে রেখেছে কেন”

সেই সব আজ অতীত। প্রয়াত হয়েছেন সুভাষ চক্রবর্তী,জ্যোতি বসু। কিন্তু ২০১৮ সাল দুর্গাপুজো যেন একবার মনে করিয়ে দিলো সুভাষ চক্রবর্তীর সেই তারাপীঠে পুজো দেওয়ার ঘটনাকে। তারাপীঠ মন্দিরে পুজো দেওয়ার জন্য যারা সুভাষ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন সেই সকল কমিউনিস্ট নেতা আজ ব্যাস্ত দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে । তাঁরা আজ নাস্তিক নয় আস্তিকে হয়ে উঠেছেন । ভোট বড় বালাই। আর তাই লোকসভা ভোটের আগে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে মানুষের কাছে পৌছাতে এবার দুর্গাপুজোকে বেছে নিলেন বিমান বসু,তন্ময় ভট্টাচার্য,  সুজন চক্রবর্তী,মানস মুখোপাধ্যায়ের মত বঙ্গের সিপিএম নেতারা। যারা একসময় মূর্তি পুজোয় বিশ্বাস করতেন না তারাও আজ মা দুর্গার শরণাপন্ন হয়েছেন। প্রতিবছর পুজোর সময় মন্ডপের বাইরে বুক-স্টলেই বসে থাকতে দেখা যেত লাল পার্টির নেতা-কর্মীদের। কিন্তু আজ তাঁরা মন্ডপমুখী।

 বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুকে দেখা গেছে যাদবপুরের দলের একটি বুকস্টল উদ্বোধন করতে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়ে বিমান বাবু বলেছেন, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি পুজোর জনসংযোগের বাড়তি ফায়দা তুলছে৷ সরকার টাকা বিলোচ্ছে৷ সিপিএম আর তাই বেশি দূরে থাকতে চাইছে না৷

অপরদিকে উত্তর দমদম বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিএম বিধায়ক চারটি পুজোর উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। পুজো উদ্বোধন করলেও তন্ময় বাবু স্পষ্ট বলেছেন যে, আমি সামজিকতায় আছি৷ ধর্মে নেই৷’’ ‘‘প্রতিবারই দুর্গা পুজো বেশ উপভোট করি৷ এবারও করব৷

অনান্যদের মত এবার মন্ডপে মন্ডপে ঘুরতে দেখা গিয়েছেন সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীকে। তিনি জানিয়েছেন, পুজোতে বামপন্থীরা আগেও ছিল এখনও আছে৷ কোনও পরিবর্তন হয়নি৷’’ যদিও পুজো উদ্বোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন  আমি নিজে কখনও মনে করিনি আমার পুজো উদ্ধোধন করা উচিত৷ করলে, তা নিজের প্রতি তঞ্চকতা হবে৷ কিন্তু পুজোর আনন্দ মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিতে সবসময় আছি৷’’

কিন্তু যারা একটা সময় পুজো মন্ডপের মুখো হতেন না তাঁরা আজ কেন মন্ডপমুখী? তাহলে কি নিজেদের অস্তিত্ব তলানিতে ঠেকেছে বলেই মন্ডপমুখী হচ্ছেন কমিউনিস্ট নেতারা ? না কি মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়াতেই তারা আজ বেছে নিয়েছেন মা দুর্গাকে? সেটা হয়ত সময় বলবে। কিন্তু যে কমিউনিস্ট নেতারা তারাপীঠে পুজো দেওয়ার জন্য প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীকে বিদ্রুপ করেছিলেন সেই কমিউনিস্ট নেতারাই কিন্তু আজ মা দুর্গার আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য মন্ডপে মন্ডপে ছুটে বেড়াচ্ছেন। সত্যি সময় হয়ত সব বদলে দেয়।

error: Content is protected !!