মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সপ্তাহখানেক পর কতটা বদলেছে সাঁতরাগাছি ষ্টেশনের পরিবেশ ? পরিদর্শনে ডিআরএম

কল্যাণ অধিকারী(হাওড়া)  লক্ষ্মী পুজোর আগের সন্ধ্যা । তিলোত্তমা সেজে উঠেছে কার্নিভ্যালে। একের পর এক তোরনে এগিয়ে আসছে শহরের প্রতিমা। ঠিক তখনি ঘড়ির কাটাকে কয়েক মুহূর্তের জন্য আটকে দেয় সাঁতরাগাছি স্টেশনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। বাকিটা অ্যাম্বুলেন্স এর আওয়াজ, রেলের কর্তাব্যক্তি দের ছোটাছুটি, নেতানেত্রী দের আগমন ও মৃত্যু নিয়ে দু চারকথা।

সপ্তাহখানেক হতে চললো সাঁতরাগাছি দুর্ঘটনা, রেলের একাধিক পদক্ষেপের মাঝে পরিদর্শনে ডিআরএম।

আটকে যাওয়া নিঃশ্বাস ও মৃত্যু অনেক কিছু বদলে দেয়। শুধু বদলায় না মৃত্যু নামক ভ্রূকুটি। অমৃতসরের দুর্ঘটনা রেল তদন্ত না করবার সিদ্ধান্ত নিলেও, সাঁতরাগাছি ঘটনার কঠোর অবস্থান নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে রেল এমনটাই সূত্রের খবর। ৪ ও ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম আসা যাওয়ার পথে প্রধান ওভারব্রিজ টির পরিপূরক ব্রিজ বানানো হবে বলেও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। প্রায় ১২ মিটার চওড়া ও ১৬১ মিটার লম্বা ওভারব্রিজ বানানো হবে। এখনকার ওভারব্রীজ এর চওড়ার তুলনায় যা প্রায় তিনগুণ।

সপ্তাহের প্রথম দিন সোমবার বেলা এগারোটা নাগাদ সাঁতরাগাছি পরিদর্শনে আসেন খড়গপুরের ডিআরএম। জানা গেছে সঙ্গে ছিল রেলের বাকি কর্তাব্যক্তিরা । ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মের পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে বিভিন্ন স্থান ও পরে ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম ধরে পরিদর্শন করেন । ৬ নম্বর ও ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম কে যুক্ত করা ওভারব্রিজ টিও দেখেন । সূত্রের খবর, ওই দিনের হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ সহ প্রত্যক্ষদর্শী দের মতামত নেওয়া হবে। কিভাবে এমন একটি ঘটনা ঘটে গেল তার সম্পূর্ন তদন্ত হয়ে রিপোর্ট আসলে অভিযুক্ত কর্মীদের ছাড় দেওয়া হবে না।

গত মঙ্গলবার ভর সন্ধ্যেয় সাঁতরাগাছি স্টেশনে একাধিক ট্রেন চলে আসে। সেইসময় ওভারব্রিজে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে আহত হন বেশ কয়েকজন যাত্রী। মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়। মুর্শিদাবাদ জেলার তাসের সর্দার ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাটের বাসিন্দা কালাকান্ত সিং-এর। এছাড়া গুরুতর আহত হন আরও ১২ জন যাত্রী। যারমধ্যে একজন শিশু ও এক মহিলা রয়েছে।

এ দিন দেখা গেল ডিআরএম আসবার খবরে ঝকঝকে ওভারব্রীজে নিরাপত্তারক্ষী রয়েছে অনেকে রেল সুরক্ষাকর্মী । ওভারব্রীজে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না কাউকে । টিকিট চেকিং হচ্ছে কঠোরভাবে । লাগানো হয়েছে এলইডি টিউবলাইট । সিসিটিভি ক্যামেরা ঘটনার পরের দিন থেকেই লাগানো হয়েছিল । মাইকে ট্রেনের ঘোষণা হচ্ছ বারেবারে। সর্বত্র সাজোসাজো রব। তবে অনেকে টিপ্পনী দিতে ছাড়েনি। দুর্ঘটনা বা মৃত্যু না ঘটলে কেউ জাগে না । সেদিন একটু সজাগ দৃষ্টি রাখলে অমন ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হতো কি?

তবে সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার যাতে এই ঘটনা নিয়ে ফায়দা না তুলতে পারে সে কারণে তড়িঘড়ি বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে রেলের পক্ষ থেকে। প্রসঙ্গত দুর্ঘটনা ঘটবার কয়েক ঘন্টা পরেই সাঁতরাগাছি স্টেশনে চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দুর্ঘটনা নিয়ে কার্যত ক্ষোভ উগরে দেন। রেলের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ঘটছে বলেও ঘোরতর অভিযোগ আনেন। তিনি জানান, রাজ্য সরকার রাজি আছে ওভারব্রীজ বানাবার জন্য। পরক্ষণেই চিরাচরিত ভঙ্গিতে বলেন, রেলের জায়গায় আমাদের কাজ করতে ওঁরা দেবে না। এমন সব মন্তব্য রেল ভাল ভাবে যে নেবে না তা প্রায় সকলেরই জানা।

সাঁতরাগাছি স্টেশন নিয়ে কয়েক বছর ধরে রেল গুচ্ছ পরিকল্পনা করেছে । বানানো হচ্ছে বিশালাকার বিল্ডিং। সম্পূর্ন হলে দূরপাল্লার প্রায় অধিকাংশ ট্রেন সাঁতরাগাছি থেকে রওনা দেবে । সেক্ষেত্রে বিশালায়তন জায়গার প্রয়োজন ছিল। ইতিমধ্যে ৬ নম্বর প্লাটফর্মের পাশে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের ধারে রেলের জলাশয় বুজিয়ে বানানো হয়েছে বহুতল বিল্ডিং। বাকি কাজ চলছে। তবে ওই দিনের ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রেলকে বহু প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে।

error: Content is protected !!