বি টেক পড়তে গিয়ে ব্যাঙ্গালোরে অপহৃত ত্রিপুরার ছেলে

বিশেষ প্রতিনিধিঃ রাজ্যে শিক্ষা বিপ্লব চলছে। বাম সরকারের আমলে এই কথাটাই শোনা যেত তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার থেকে শুরু করে শিক্ষামন্ত্রী সহ অনান্য মন্ত্রী ও সিপিআইএম নেতৃত্বের মুখে। কিন্তু শিক্ষা বিপ্লবের নামে বাম সরকারের আমলে কি কি ঘটেছে রাজ্যের বিদ্যালয়, কলেজ গুলিতে তা আজ রাজ্যবাসীর কাছে অজানা নয়। বাম আমলে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা এতটাই বেহাল ছিলো যে ছাত্রছাত্রীরা একপ্রকার বাধ্য হয়ে  বহিরাজ্যে পড়াশুনার জন্য যেতে বাধ্য হতো। আর এর ফলে ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই,কলকাতা সহ বহিরাজ্যের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রাজ্যে শিক্ষা ব্যবসা শুরু করেছিলো। একটা সময় রাজ্যে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছিলো সারদা-রোজভ্যালীর মত বিভিন্ন চিটফান্ড। ঠিক সেই একই কায়দায় রাজ্যে শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করছে বহিরাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলি। আর যার জেরে সমস্যার পড়ছে রাজ্যের ছেলেমেয়েরা।

চলতি সপ্তাহে ব্যাঙ্গালোরে মাঝরাস্তা থেকে অপহরন করা হলো রাজ্যের এক ছাত্রকে। ঘটনাটি ঘটেছে ব্যাঙ্গালোরের এম জি রোডে। অপহৃত ওই ছাত্র জানিয়েছেন যে, রাতের বেলা বাইক নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় আচমকাই মাঝ রাস্তায় দুটি চার চাকার গাড়ি নিয়ে বেশ কয়েকজন স্থানীয় যুবক রাস্তার মধ্যে আটকায়। এবং সেখান থেকেই তাকে অপহরন করে নিয়ে যায়। গাড়ির মধ্যেই তাকে বেধড়ক মারধোর করা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি অপহরণকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয় যে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার পরেই তাকে সেখান থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। ওই ছাত্রের আরও অভিযোগ যে তাকে গাড়ির মধ্যে রেখেই বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানো হচ্ছিলো। এবং তার কাছ থেকে মানিব্যাগ, মোবাইল সমস্ত কিছু কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো। সারা রাত গাড়িতে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানোর পর পরদিন সকালে স্থানীয় একটি হোটেলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছে ওই ছাত্রটি। এরপর সে বাড়িতে ফোন করে সমস্ত বিষয়টি জানায়। এবং বাড়ি থেকে ৪ লক্ষ টাকা পাঠানোর পর সেই ছাত্রটিকে ছেড়ে দেয় অপহরনকারীরা। শুধু তাই নয় অপহরণকারীরা রীতিমত হুমকি দেয় যে তাকে আর ব্যাঙ্গালোরে থাকা যাবেনা। এরপরেই সেই ছাত্র ব্যাঙ্গালোর থেকে সোজা আগরতলায় চলে আসে। ওই ছাত্রের আরও অভিযোগ যে, এই ঘটনা এবার প্রথম নয়। এর আগে অপহরনের মত ঘটনা না ঘটলেও ত্রিপুরা রাজ্য থেকে যারা ব্যাঙ্গালোরে পড়াশুনার জন্য যায় তাদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে সেখানকার স্থানীয়রা।

আর এখানেই উঠছে একাধিক প্রশ্ন। যেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে ব্যাঙ্গালোরের বিভিন্ন কলেজ গুলিতে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশুনার জন্য ভর্তি হচ্ছে সেখানে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই কেন? আর এই ঘটনা তো আজকে প্রথম নয়, এর আগেও একাধিক বার বিভিন্ন রকমের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন অপহৃত ওই ছাত্রটি। তাহলে কেনো আগে থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যে এইধরনের ঘটনা ঘটেছে সেই সমস্ত ঘটনার কথা কলেজ কতৃপক্ষ জেনে থাকলেও দোষীদের বিরুদ্ধে কেন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? কেনো প্রশাসনকে এই বিষয়ে অভিযোগ জানানো হয়নি? তাহলে কি শুধু মাত্র ব্যবসা করার লোভে এই সকল ঘটনা গুলি চেপে গেছেন ব্যাঙ্গালোরের বিভিন্ন কলেজ কতৃপক্ষ? যদি সেই সমস্ত ঘটনা সামনে আসে তাহলে তাদের এরাজ্য থেকে ব্যবসা গুটিয়ে পালাতে হবে বিভিন্ন চিটফান্ডের মত সেই ভয়েই কি সমস্ত ঘটনা ধামাচাপা দিতে চেয়েছেন তারা। বিশেষ সূত্রে যে খবর ডাকবার্তা ডট কমের কাছে এসেছে যে আর আর কলেজে পাঠরত রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের সাথে এইধরনের অনেক ঘটনাই ঘটেছে এবং অনবরত ঘটে চলেছে। তারপরেও কিন্তু নীরব কলেজ কতৃপক্ষ। রাজনৈতিক মহলের অভিযোগ যে, বাম আমলে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার যেভাবে চিটফান্ডের বাড়বাড়ন্ত বেড়েছিলো সেই একই ভাবে বাম আমলেই বহিরাজ্যে থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি রাজ্যে শিক্ষা ব্যবসা নিয়ে জাঁকিয়ে বসেছে। আর এই সমস্ত শিক্ষা ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পরে বহিরাজ্যে গিয়ে নানা বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা। রাজনৈতিক মহলের অভিমত বাম আমলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী বা রাজ্য সরকার যদি সেই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতো তাহলে আজ এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো না রাজ্যের ছাত্রটিকে। এখন দেখার যে রাজ্যে নতুন সরকার এই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির বিরুদ্ধে আদেও কোন ব্যবস্থা নেয় কি না? না কি বাম আমলের মতই ধৃতরাষ্ট্রের মত অন্ধ হয়ে থাকেন। সেটাই এখন দেখার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here