পুজো মিটতেই ভ্রমণে বাঙালি, হাওড়া স্টেশনে কেউ দক্ষিণে চলেছে তো কেউ উত্তরের কোলাজ ধরতে

কল্যাণ অধিকারী(হাওড়া) চোখের সামনে বৈশাখী মেঘলা করা পাহাড়ের চূড়া । মাথার উপর একঝাঁক পাখি ডানা ঝাপটে উড়ে চলেছে ওই দিগন্ত মেলা পাহাড়ের দিকে। পুজোর ছুটিতে এমনি চমকপ্রদ দৃশ্য দেখতে ছুটে চলেছে ভ্রমণ পিপাসু বাঙালি।

দুর্গাপূজা কাটতেই ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েছে বাঙালি । উত্তরের মিঠে রোদে বসে গা ভিজিয়ে নিতে চাইছে অনেকে । কেউ কেউ আবার দক্ষিণের সাগরে ডুব দিতে চাইছে। এমনিতেই এবারে দুর্গাপূজায় টানা ১৬ দিন ছুটি । এর সাথে কটা দিন ছুটি লিখিয়ে দিন কয়েক পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে কসুর করছেন না । কারো টিকিট কনফার্ম হয়নি তো কেউ আরএসি ওইটুকু এডজাস্টমেন্ট করে পৌঁছে যাওয়া। বাকিটা সময় অফুরন্ত আনন্দে গা ভাসিয়ে দেওয়া।

বাগবাজার থেকে লঞ্চে করে হাওড়া স্টেশনে এসেছেন পরিবার সঙ্গে নিয়ে খোকন সরকার । উদ্দেশ্য কাছে পিঠের অযোধ্যা পাহাড় ঘুরে আসবার । দিন দুই-তিন স্ত্রী পুত্রকে নিয়ে একটু অন্যভাবে কাটানো । পুজোর ছুটি শেষ হলেই সেই ডিউটি। তাছাড়া ছেলের পরীক্ষা তখন তো আর ছুটি পাওয়া মুশকিল। অন্যদিকে কলেজ পড়ুয়া হৃতিক দাস এসেছেন পাঁশকুড়া থেকে । পরিবারের সাথে চেন্নাই যাচ্ছেন । হাতে করমন্ডল এক্সপ্রেসের টিকিট । ঘোরাঘুরির মাঝে বাবার শরীর একবার চেকআপ করিয়ে ফিরবেন । টিকিট পাওয়াটা বড্ড চাপের ছিল। গতকাল টিকিট কনফার্ম হয়েছে।

বেলানগর থেকে শিশির খাঁড়া সপরিবারে চলেছেন পুরী । চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ছুটি নিতে হয়েছে । তাছাড়া এই পুজোর কটাদিন কাটিয়ে একটু বাইরে ঘুরে এসে মনটাকে কাজে বসাতে চাই । প্রতিবছর যাওয়া হয় না । এ বছর ইচ্ছে ছিল । সেই মত টিকিট পেয়ে তর সইছে না আর । দুগ্গা দুগ্গা করে ট্রেনে চেপে পড়া। বাকিটা সকালে সমুদ্র তটে পৌঁছে সূর্যের চকমকি দেখা। হাওড়া স্টেশন জুড়ে দেমাকি ভিড়। বহু মানুষ ছুটির গন্তব্যে পৌঁছাতে চাইছেন। সব বয়সি ভিড়ে গমগম করছে প্লাটফর্ম চত্বর।

রেল সূত্রে খবর, অন্যান্য বারের মতো চাপ রয়েছে এবছরও। কোন ট্রেন বাতিল নেই। রয়েছে পুজা স্পেশাল এর মতো বাড়তি ট্রেন। টিকিটের জালিয়াতি রুখতে ও বেশি টাকা দিয়ে ততকাল টিকিট করে দেওয়ার প্রতারণা ধরতে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে রেল। ইতিমধ্যে পাঁশকুড়া এক এজেন্ট কে পাকড়াও করা হয়েছে।

মান্না দের প্রাণবন্ত সুরে ‘এই শহর থেকে আরও অনেক দূরে চলো কোথাও চলে যাই’ গানটা গুনগুন করে গাইতে-গাইতে ভ্রমণ রসিক বাঙালি পরিবার-পরিজন নিয়ে চলেছে অন্য শহরে। কারো সাথে ধাক্কা লেগে, ব্যাগে ব্যাগে ঠোক্কর খেয়ে ছন্দগতিতে তারা কাটিয়ে আসতে চলেছে ক’দিনের ছুটির আমেজ। বাকিটা ক্যামেরায় আঁকতে হবে রঙ দিয়ে কোলাজ। চোখের দিগন্তে পাহাড়ি আদিবাসী সংস্কৃতির ছোঁয়া। সমুদ্রের নীল জলকেশী বইয়ে দেবে শীতল নোনতা হাওয়া। মনে শুধুই খেয়ালী সুর।

error: Content is protected !!