আপনি কি জানেন মহাভারতে কেন দ্রৌপদীর পাঁচ জন স্বামী ছিলো?

মহাভারতের দুই সেন্ট্রাল ফাইটিংপক্ষ কৌরব আর পাণ্ডবের পার্সোনাল ফ্যামিলিগত ঝামেলি তো বাবা ব্যাসদেবের কল্যাণে আর পার্সোনাল নেই। ফ্রম সান্তানা টু সুফিয়ানা, ফ্রম দ্বাপর টু কলি– এই ঘটনা সব্বাই জানে।

এই ঝামেলার মেন স্টার্টিং পয়েন্ট ছিলো সেই নাজুক বচপন, যখন থেকে কৌরব আর পাণ্ডবদের চার চক্ষুর মিলন হলো, আর “Enemy at First Sight”  নীতি অনুযায়ী বেচারি পাণ্ডবদের ওপর শুরু হল কৌরবদের জ্বালাতুনে “দাদাগিরি”।

বড় হয়ে যুধিষ্ঠিরের রাজ্যাভিষেকের পর, দুষ্টু দুর্যোধনের দুষ্টুমির জ্বালায় একটুর জন্য, জাস্ট একটুর জন্য শিক-কাবাব হতে হতে বেঁচে গিয়ে Globetrotter না হোক, অন্তত India-trotter হিসাবে ঘুরতে ঘুরতে পাণ্ডবরা এসে হাজির হলেন পাঞ্চাল রাজ্যে। এখানে তখন চলছে পাঞ্চালের রাজকন্যা দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরের ফাইনাল রাউন্ড। সারা রাজ্য জুড়ে পাবলিকের এক্সাইটমেনট তো তখন T-20 র ভারত-পাকিস্তানের ফাইনাল ম্যাচকেও হার মানাবে। এর মাঝখানেই, ভারতের জিততে যখন আর জাস্ট ২ রান দরকার,এদিকে ৯টা উইকেট পড়ে গেছে, এমন নখ-খাওয়া টেনশনের টাইমে সিনে এন্ট্রি মারলেন অর্জুন।

টার্গেট মাছের চোখকে তীরের এক খোঁচায় কানা করে দিয়ে দর্শক + পাঞ্চালী = এক তীরে দুই পাখি বধ! ব্যাস!!! তুমুল ঝিঙ্কাচিকার মধ্যে অর্জুন পেয়ে গেলেন দ্রৌপদীর বরমাল্য (বিজয় মাল্য নয় কিন্তু)। আর সঙ্গে সঙ্গে গ্যালারিতে রিজার্ভ বেঞ্চে বসা বাকি চার ভাইয়ের কাপ জেতার আনন্দ আর দেখে কে!!!

এবার তো সবাই মিলে দ্রৌপদীকে নিয়ে স্টার্ট করলেন ‘যাত্রা’।

 “আমাদের যাত্রা হল শুরু”(সাধে কি আমি বলি, যে কোনো ফর্মে বা শেপে কবিগুরু ছিলেন, আছেন, থাকবেন বস! এখানেও কেমন খাপে খাপ খেয়ে গেছেন দেখুন একবার!!!)। তো, কুটিরে পৌঁছানোর পর সব্বার আগে Annual Exam – এর রেজাল্ট শোনানোর রেসে কুন্তীর কিচেনের দিকে পাঁচ ভাই তো মারলেন পড়ি-কি-মরি দৌড়।

বেচারি পাঞ্চালী! একা একা টুক-টুক করে হেঁটে চললেন (হাই-হিল জুতো পরে তো আর দৌড়ানো যায় না। নাহলে বাকি সবার সাথে ঘরে ঢুকলে কুন্তী হয়তো একবার দেখলেও দেখতে পেতেন তাঁকে!!! হায় রে কৃষ্ণা!! স্টাইল মারতে গিয়ে ফিউচার কেরোসিন হয়ে গেলো!)

এদিকে কুন্তী তো এক্কেবারে নরেন্দ্র মোদীর মতো ডিক্লারেশান দিয়ে বসে আছেন, -“যা এনেছ পাঁচ জনে ভাগ করে নাও”। (আজকের যুগ হলে নারীবাদীরা এক মুহূর্তে খ্যাঁক করে উঠতো!) কি ভয়ানক কাণ্ড! নায়িকার কান্না, নায়কের অসহায়তা,- প্লট একেবারে চরম সাসপেন্সের মুহূর্তে। অতঃপর আসরে এসে হাজির হলেন ডিরেক্টর, আদি ও অকৃত্রিম বাবা ব্যাসদেব। সত্যিই তো, নিজের বানানো প্যাঁচে বেঘোরে নায়িকাকে জড়িয়ে পড়তে দেখলে কোন ডিরেক্টরের না খারাপ লাগে! আহারে! এদিকে আবার মাতৃবাক্য অলঙ্ঘনীয়।

তাই বাধ্য হয়ে জেনেরাল কন্সটিটিউশানে বসলো আমেনডমেনট, ঘোষিত হল বিধান,- “দ্রৌপদী গত জন্মে মুনি কন্যা ছিলেন।তাঁর নাম ছিল নলয়িনী। পছন্দমত স্বামী না ম্যাচ করায় শুরু করেছিলেন তপস্যা। সন্তুষ্ট হয়ে দেবাদিদেব মহাদেব এসে দাঁড়াতে প্রার্থনা করেন,- প্রভু! এমন স্বামী দাও, যে একাধারে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ, বলশালী, শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা, শ্রেষ্ঠ সুন্দর, আর দয়াময় হয়। মহাদেব তো আলাভোলা। যে যা চায়, সম্ভব-অসম্ভব  না ভেবে তাই দিয়ে ফেলেন।  ব্যাস! দ্রৌপদীকেও দিয়ে ফেললেন তাঁর বায়না-করা খেলনা।। কিন্তু এই অতর্কিত ঝামেলায় দেবতারা পড়লেন মহা ফ্যাসাদে। কারণ, একসাথে এই পাঁচ গুণ মেলা তো জাস্ট ইম্পসিবল। শেষে সৃষ্টিকর্তা দাড়িওলা দাদু ব্রহ্মার সাথে রফা হল, দ্রৌপদী পরজন্মে একসাথে এই পাঁচ গুণের অধিকারী পাণ্ডবদের একমাত্র স্ত্রী হবেন। সন্ধির সেই শর্ত অনুযায়ী, দ্রৌপদীর প্রার্থনা থেকে ‘একাধারে’ শব্দটি জাস্ট ডিলিট করে দিলেন দেবতারা। এই বিধান শুনে অবশেষে সবার চোখে জল থাকা সত্ত্বেও মুখে হাসি এলো। আর দ্রৌপদীকে পাঁচ জনের গলাতেই একসাথে মালা দিতে হল। হয়ে গেলেন তিনি পাঁচ জনের স্ত্রী।

error: Content is protected !!