সৌমাল্য ব্যানার্জি(মহিষাদল) নেই অস্ত্রের ঝনঝনানি, ঘোড়ার খুরের আওয়াজ। রাজত্ব থাকলেও রাজ বৈভব আজ অনেকটাই বিলীন। তবুও রীতিনীতি মেনে আজও ২৫০ বছরের মহিষাদল রাজবাড়ির দূর্গা পুজো তার আপন ঐতিহ্য বহন করে চলেছে । ১৭৭৬ সালে রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায়ের ধর্মপরায়ণা স্ত্রী রানী জানকী রাজবাড়িতে দূর্গা পুজো প্রচলন শুরু করেন । সেই থেকেই পুজো হয়ে আসছে রাজবাড়িতে , কিন্তু পরে রানী ইন্দ্রাণী আটচালার দূর্গা মন্ডপ তৈরি করেন । এখানে প্রতিপদ থেকেই ঘট তুলে পুজো শুরু হয়ে যায় । পরিবারের প্রবীণ ও নবীন সদস্যদের বলেন, আগে জাঁকজমক করে হতো পুজো। মাঝে কয়েক বছর কিছুটা পুজোর আমেজ ম্লান হলেও এখন কিন্তু আবার সেই জাঁকজমক ফিরে এসেছে ।
মহালয়ার পরেই প্রতিপদে ঘট তুলে এখানে পুজো শুরু হয়। আগে যে তিথি তত মন চালের ভোগ হত যেমন প্রতিপদ তিথিতে এক মন। দ্বিতীয়াতে দু মন থেকে শুরু করে দশমীতে দশ মন চালের ভোগ হত এখন তা আর হয়না কিন্তু ভোগ হয় । এই রাজ পরিবারের কুলো দেবতা যেহেতু গোপালজীউ সেই কারনে এখানে বৈষ্ণব মতে পুজো হয় । আগে সন্ধিপুজোতে কামান দাগা হত কিন্তু সরকারের শব্দ দূষণের নিষেধাজ্ঞার জন্য তা আজ আর হয় না। পুজো কটা দিন রাজ পরিবারের রাজ অস্ত্র তলোয়ার দেবী দূর্গার পায়ে রাখা থাকে অর্থাৎ এই সময় যুদ্ধ নয় শান্তির বাতাবরণ যাতে থাকে সেই জন্য। আগে চার দিন ধরে আটচালায় হত যাত্রা, শাস্ত্রীয় সংগীত, পালাগান। এখন আর যাত্রা হয়না তবে কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রাজ পরিবার। পরিবারের মহিলা সদস্যরা আগে চিকের আড়ালেই থেকেই অনুষ্ঠান দেখতো এখন ও সেই রীতি চলে আসছে । দশমীর দিন মায়ের কনকাঞ্জলি দেন রাজ পরিবারের মহিলা সদস্যরা । আগে এখানে সিঁদুর খেলা হতোনা কিন্তু এখন হয় তবে সেটাও পর্দার আড়ালে । আগে নৌকায় করে শোভাযাত্রা সহকারে হিজলী টাইডাল ক্যানেল ধরে গিয়ে রূপনারায়ণ নদীতে বির্সজন দেওয়া হত এখন তা আর হয়না। দূর্গা মন্ডপের পাশেই ভবানী দিঘীতেই এখন বির্সজন দেওয়া হয় । তবে এই রাজ পরিবারের সদস্যরা এখন ব্যবসার সূত্রে কোলকাতায় থাকেন। কিন্তু পুজোর চারটা দিন এই মহিষাদলের বাড়িতে এসে জড়ো হন সবাই। খাওয়া দাওয়া জমিয়ে আড্ডা দূর্গা মন্ডপে সময় কাটানো। কলকাতার থিম পুজো ছেড়ে প্রায় ১০০ কিমি দূরে মহিষাদলে পরিবারের সঙ্গে পুজোয় মেতে ওঠা এক অন্য আনন্দ দেয় বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যারা।