“যেতে দেব না,কি করবি বল’, হেনস্থার শিকার ইমন

পৃথা ভট্টাচার্যঃ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বরাবর বলে এসেছেন রাজ্যের শিল্পীরা এরাজ্যের গর্ব। শিল্পীদের জন্য প্রতিবছর বিভিন্ন পুরস্কারের আয়োজন করে থাকে রাজ্য সরকারের তথ্য সংস্কৃতি দফতর। এহেন সেই রাজ্যেই ফের একবার হেনস্তার শিকার হলেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত বিশিষ্ট এক সংগীত শিল্পী। সোমলতা আচার্য মেখলা দাশগুপ্তের পর এবার ইমন চক্রবর্তী। এবার ঘটনাস্থল কৃষ্ণনগর। রবিবার রাতে কৃষ্ণনগর পুরসভার পক্ষ থেকে আয়োজিত জলসায় অনুষ্ঠান করতে গিয়ে রীতিমত হেনস্থার শিকার হয়েছেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত এই সংগীত শিল্পী। অনুষ্ঠান শেষের পর ইমন চক্রবর্তী সহ তার পুরো টিমকে আটক করে রাখা হয় বলে ফেসবুক লাইভে এসে জানিয়েছেন সংগীতশিল্পী নিজেই। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন রীতিমত তাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়, “যেতে দেব না, কি করবি বল”। এই পুরো ঘটনা অনুষ্ঠান শেষে ঘটনাস্থল থেকে ফেসবুক লাইভে তিনি তুলে ধরেন।
প্রতিবছর কৃষ্ণনগর পুরসভার পক্ষ থেকে পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে জলসার আয়োজন করে। এবছরও তার কোন ব্যাতিক্রম হয়নি। রবিবার রাতে সেই অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে গিয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত সংগীত শিল্পী ইমন চক্রবর্তী। যাওয়ার পর থেকেই তাদের সাথে অসহযোগিতা করা হয় বলে নিজের ফেসবুক লাইভে এসে অভিযোগ জানিয়েছেন ইমন। তার অভিযোগ যে, সন্ধ্যায় তিনি ও তার সহশিল্পীরা কৃষ্ণনগর এসে পৌঁছান সেই সময় আয়োজকদের পক্ষ থেকে কারোর দেখা মেলেনি। যে গেস্ট হাউসে তাদের রাখা হয়েছিল সেখানেও তাদের কেউ সাথে করে নিয়ে যায়নি এবং সন্ধ্যার জলখাবার টুকু তাদের কেউ এনে দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
তিনি দাবি করেছেন যে, ৮ টায় তারা পারফরম্যান্স করতে ওঠেন । দেড় ঘন্টা অনুষ্ঠান করার কথা থাকলেও প্রায় পৌণে দু ঘন্টার মত তিনি অনুষ্ঠান করেন। এরপরেই শুরু হয় আসল ঘটনা। অনুষ্ঠান শেষের পর শিল্পী ও তার সহশিল্পীরা যাতে বাইরে বেরোতে না পারেন সেই জন্য আটকে দেওয়া হয় গেট। সাথে সাথেই ঘটনার প্রতিবাদ করেন শিল্পী ইমন চক্রবর্তী। ঘটনাস্থল থেকেই সরাসরি ফেসবুক লাইভ করেন তিনি। এবং পুরো ঘটনা তুলে ধরেন সকলের সামনে। উদ্যোক্তারা শিল্পীর সাথে খারাপ ব্যবহার করলেও বিপদের সময় ইমনের পাশে এসে দাড়াঁন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারাই শিল্পীকে গেট ভেঙে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এবং শিল্পীর পাশে দাঁড়িয়ে ফেসবুক লাইভে এসে এই ঘটনার জন্য উদ্যোক্তাদের শাস্তিরও দাবি করেছেন । স্থানীয়রা এও জানিয়েছেন যে ইমনের গান তাদের খুব ভালো লেগেছে। শিল্পী যে তাদের সাথে সেলফি তুলেছেন তাও জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
কৃষ্ণনগর থেকে ফেরার পথে দ্বিতীয়বারের জন্য ফেসবুক লাইভে আসেন তিনি। কৃষ্ণনগর পুরসভার বিরুদ্ধে আইনের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন ইমন চক্রবর্তী। যদিও ঘটনা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অসীম সাহা। এই ঘটনায় তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমা শাসক।

ইমন চক্রবর্তী হেনস্তার পর একাধিক প্রশ্ন উঠছে ইতিমধ্যে। কেন বারবার হেনস্থার শিকার হতে হবে শিল্পীদের? রাজ্যে শিল্পীরা যদি বার বার আক্রান্ত বা হেনস্থার শিকার হন তাহলে রাজ্যের সাধারণ মানুষ কিভাবে নিরাপত্তা পাবে? আর এই ঘটনা তো প্রথম নয়। এর আগেও দুবার এইধরনের ঘটনার সাক্ষী থেকেছে গোটা রাজ্য।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে একই অভিজ্ঞতা হয় সারেগামা খ্যাত শিল্পী মেখলা দাশগুপ্তেরও। পুলিশের বিরুদ্ধে সরাসরি হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন মেখলা। ফেসবুক লাইভে এসে রীতিমত কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে উত্তরবঙ্গে ধূপগুড়িতে একটি স্কুলে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে হেনস্তা মুখে পড়েছিলেন গায়িকা সোমলতা আচার্য। স্কুলেরই এক শিক্ষক মদ্যপ অবস্থায় মঞ্চে ওঠে শিল্পীর সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছিলেন বলে অভিযোগ। শেষপর্যন্ত পুলিশ গিয়ে সোমলতাকে উদ্ধার করে। এভাবে যদি একের পর এক রাজ্যে শিল্পীরা হেনস্থার শিকার হতে থাকেন তাহলে কি আগামীদিনে রাজ্যের কোন শিল্পী কি আদেও কোন অনুষ্ঠানে পারফরম্যান্স করতে যাবেন? আর এরপরেও দোষীদের বিরুদ্ধে পুলিশ যদি কোন ব্যবস্থা না নেয় তাহলে কি আর পুলিশের উপর আস্থা থাকবে রাজ্যবাসীর? রাজনৈতিক মহলের অভিযোগ, ২১ জুলাই হোক বা সরকারি অনুষ্ঠান কিংবা ভোটপ্রচার মুখ্যমন্ত্রীর ভরসা কিন্তু টালিগঞ্জ এর কলাকুশলী থেকে শুরু করে রাজ্যের শিল্পী মহল। কিন্তু তারা যখন আক্রান্ত হচ্ছেন সেই সময় কেন মুখ্যমন্ত্রীকে সরব হতে দেখা যায়না? এরপরেও কি মুখ্যমন্ত্রী চুপ থাকবেন না কি দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির বিধান দেবে সেটাই এখন দেখার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here