“কৃপা করে মা আসছেন দিনানাথের কুটিরে

প্রদীপ সাঁতরাঃ ১৩০৮ বঙ্গাব্দে  স্বর্গীয় শ্রী মহেন্দ্রনাথ ঘোষ মায়ের অকাল বোধনের সময় বলেন, “কৃপা করে মা আসছেন দিনানাথের কুটিরে।” কারণ তার বাবা দীননাথ ঘোষের তৈরী এই বাড়ি ছিল আদতে একটি কুটির । তারপর প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এই পূজা চলছে । সময় নিজের মতো করে বাড়ির পরিবেশ পাল্টে নিলেও ১১৭বছরের পুরোনো এই পুজো তার ঐতিহ্য একই ভাবে বয়ে নিয়ে চলেছে ।

চন্ডীপাঠ, প্রায় দুশো নারকেলের নাড়ু প্রস্তুত, ঘট পুজো এই দিয়েই মহালয়ার পরের দিন থেকে শুরু হয় পুজো । এই কদিন মাছ বাদে অন্য আমিষ খাবার বাড়িতে নিষিদ্ধ। মা ও তার সন্তানদের সাজ সম্পূর্ণ হয় ষষ্ঠীর দিন, সোনার গয়না পরিধানের মধ্যে দিয়ে। সপ্তমীতে কলা বৌ স্নানের সাথে সাথে মনসা পুজোও হয়। বিভিন্ন প্রজন্মের ষাট জন সদস্য এই পুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । অষ্টমীতে চন্ডীপাঠ, অঞ্জলি, সন্ধিপুজোর সাথে সাথে ‘খই-নাড়ু বিতরণ’ ও ‘ধুনো পড়া’ এই পুজোর স্বতন্ত্রতা প্রতিষ্টা করে। মায়ের কাছে মনোস্কামনা জানানোর এক বিশেষ উপায় এই ধুনো পড়া । কোনো বিবাহিত মহিলা আবার বুকের মাঝখান অল্প কেটে এক ফোটা রক্ত বেল পাতায় লাগিয়ে মায়ের কাছে নিবেদন করেন।

সন্ধিপুজো চলাকালীন একশো আটটা পদ্মফুলের মালা নিবেদন করা হয় যা বাড়ির মহিলা সদস‍্যরাই তৈরী করেন। একশো আটটা মাটির প্রদীপও জ্বালানো হয়। নবমীতে কুমারী পুজো ও হোমযজ্ঞের সাথে সাথে হয় খাওয়া দাওয়া। মাটিতে আসন পেতে বসে খাওয়ার এই চল যেন আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাথে দেখা হওয়ার এক শুভক্ষণ। প্রায় আট দিন শুধুমাত্র মাছের সাথে ঘর সংসার করার পর নবমীতে অন্যান্য আমিষ খাবারের সঙ্গে মিলন হয় বাড়ির সদস্যদের। পুজোতে নানারকম নিরামিষ পদ এই বাড়ির ঐতিহ‍্যের সাথে মিশে আছে। নারকেল কুচি দিয়ে ঘুগনি, কুমড়োর ছক্কা, লুচি, ছোলার দল, ধোকার ডালনা, শুক্ত, ছ‍্যাঁচড়া, সুজির হালুয়া এই সবকিছুর সুবাসই এই বাড়ির ধুপ ধুনোর গন্ধের সঙ্গে মিশে থাকে। দশমীতে হয় প্রদক্ষিণ। বাড়ির সব সদস্য মায়ের মূর্তিকে প্রদক্ষিণ করে। এরপর চলে দধিকর্মা খাওয়া। দুপুরের মেনুতে খাসির মাংস বাধ্যতামূলক। সন্ধ্যাবেলা বরণের পর চলে সিঁদুর খেলা। ঘোষ বাড়ির সিঁদুরখেলা দেখতে বহু মানুষ জড়ো হয় এই বাড়ির উঠোনে। এইভাবে হৈহৈ করে পুজো সম্পন্ন হলেও দ্বাদশীতে কীর্তন ও খাওয়ার মধ্যে দিয়েই পুজোর সমাপ্তি ঘটে। মায়ের এই অকাল বোধনে এই পরিবার নিজেদের স্বতন্ত্রতা ও ঐতিহ্যকে বজায় রেখেই মেতে ওঠে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here